Now Reading
নারীর স্বাধীনতা যে পরাধীনতার শিকল আজও

নারীর স্বাধীনতা যে পরাধীনতার শিকল আজও

women rights

‘অধিকার, স্বাধীনতা, আত্মপরিচয়’ – শব্দগুলো নিয়ে নারীরা কথা বললেই বলা হয় মেয়েটা নারীবাদী। নারীবাদী বিষয়টির ব্যাপ্তি অনেক। একজন মানুষ হিসাবে যে বিষয়গুলো পুরুষের বেলাতে প্রযোজ্য সে একই বিষয় নারীদের বেলাতে কেন নয়? এ কথাটা সবার আগে ভাবতে হবে নারী সমাজকে যার যার অবস্থান থেকে।

সামগ্রিক উন্নয়নে নারী পুরুষের সাথে সমানতালে কাজ করার ক্ষমতা রাখে এবং কাজ করছে। কিন্তু নারীদের বেলায় মানুষে হিসাবে তার প্রাপ্য হিসাবের ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়।

এ সমাজের বাস্তবতাতে দেখা যায়, একটি মেয়েকে সবার আগে তার পরিবার থেকে ধারনা দেয়া হয়, ‘তুমি যত বড় হও না কেন, নারী হিসাবে তুমি পুরুষের সমকক্ষ হবে না।’ তাই বাইরের জগতে প্রতিষ্ঠিত অনেক নারী এখনো তার পরিবারে পরাধীনতা বেড়া জালে আবদ্ধ। স্বাধীনতা বলতে শুধু চলাফেরাতে স্বাধীন হলে হয় না। এখনো মনে করা হয় একজন নারী যতই মেধাবী হোক না কেন সে পুরুষের চেয়ে কম বুঝে।

পরিবার পরিচালনা, সন্তানের লালন পালনের দায়িত্বগুলো নিজে থেকে ধারণ করে নারী জন্মগত ভাবে। একসময় ঘর সামলানো নারীদের একমাত্র কাজ ছিল।কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সে নারীরা এখন জীবন যাপনে দশভুজার মত ঘরে বাইরে কাজ করে।যেখানে একজন পুরুষ অফিস আদালত,ব্যবসা বাণিজ্যের কাজের বাইরে দিন শেষে ঘরে ফিরে সংসারের আর কিছু নিয়ে ভাবতে নারাজ। সেখানে এ কাজগুলো করার পরে নারী ঘরে ফিরে সংসার সন্তান সব সামলে যায় দিনের পর দিন।অথচ এ নারী যখন নিজের মত করে একটু সময় চায় নিজেকে নিয়ে ভাবতে,তখনই ঘটে বিপত্তি।

সত্যিকার ভাবে নারীরা স্বাধীন একথাটার অন্তরালে পরাধীনতার শিকল পায়ের নূপুরের মত বেড়িয়ে আছে নারীদের জীবনের পদে পদে।

সামাজিক অবস্থানের প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, অনেক উচ্চবিত্ত পরিবারে উচ্চ শিক্ষিত নারীকে শো কেসে সাজানো চাবি দেয়া সাজগোজ করা পুতুলে পরিণত করা হয়। নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে সে পুতুল সুন্দর কথাতে সুখী সুখী ভাব নিয়ে নিজের চেয়ে স্বামীর প্রশংসা করাটাই মুখ্য বিষয় হয় তার কাছে। কারণ নিজের জীবনের সকল কিছু অলীক হয়ে গেছে স্বামী সংসারের কাছে । হয়ত এক জীবনে তার স্বপ্ন ছিল নিজের মেধা দিয়ে নিজের মত করে প্রতিষ্ঠিত হবার। স্বামীর পরিচয় দিয়ে সব পেয়ে ও তার নিজের বলে কিছু নেই।তাই স্বাধীনতার নামে এ যাপিত জীবন তার কাছে রুমঝুম নূপুরে বেদনার সুর।

এমন বেদনার বিষাক্ত ছোবল থেকে বেরিয়ে আসার পথটা সহজ নয়। এর জন্য নিজের মনের বন্ধ দুয়ার খুলে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে।ভাবতে হবে কন্যা জায়া জননী এ হলও জীবন তিন রূপ।কিন্তু সবার আগে আমি একজন মানুষ। আমার জগত আমাকে চিনতে হবে।পারিবারিক বন্ধন সামাজিক রীতিনীতিতে নিজের আত্মপরিচয় টা হবে মুখ্য।শুধুমাত্র উপার্জন করলেই আত্মনির্ভরশীল মনে করা হবে তা কিন্তু নিয়।যে নারী সারাদিন ঘর সন্তান সামাল দেয় সে কাজটি যে দেশের অর্থনীতিতে বিশাল ভূমিকা রাখে তা বুঝতে হবে সবাইকে।

মোটা দাগে বলতে হয় চিন্তা চেতনাতে নারীর স্বাধীনতা সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে।নারী বলে কম বুঝে এমন ধারনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে পুরুষ সমাজ ব্যবস্থাকে। তবেই নারী পাবে সত্যি কারের স্বাধীনতা। পাবে আত্মপরিচয়ের বিকশিত রূপ।

What's Your Reaction?
Excited
0
Happy
0
In Love
0
Not Sure
0
Silly
0
View Comments (0)

Leave a Reply

Scroll To Top