ডায়েট মেনে চললে নিজেকে ফিট রাখা যায় সহজেই: নুসরাত ফারিয়া

বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া নিজেকে ফিট রাখার কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন। নুসরাত ফারিয়া খুবই সুন্দরী। কিছুদিন আগেই পেশাদার সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে তাঁর প্রথম মিউজিক ভিডিও ‘পটাকা’ প্রকাশিত হয়েছে। অভিনেত্রী হিসেবে নির্দিষ্ট একটা চেহারা ধরে রাখার বাধ্যবাধকতা আছে তার। সেই সঙ্গে শারীরিকভাবে নমনীয় থাকতে হয়, তা না হলে মিউজিক ভিডিওর নাচের দৃশ্যগুলি দেখতে ভালো লাগবে না।
তারপর আছে খাদ্যরসিক বাঙালির খাবারের প্রতি টান, এপার-ওপার মিলিয়ে অজস্র-রকম মিষ্টির হাতছানি। এই পরিস্থিতিতে নিজেকে ফিট রাখার জন্য নুসরাত ঠিক কি করেন? নায়িকা একটা খুব সোজা রাস্তা বাতলে দিচ্ছেন। বলছেন, “আমার মনে হয়, ফিটনেস বিষয়টা শুরু হয় মন থেকে। শুধু শরীরের কথা ভাবলে চলবে না, আপনাকে মানসিকভাবে নিজেকে ফিট রাখতে হবে। এই দুটোকে একসঙ্গে মেলাতে পারলেই বেশ খানিকটা কাজ হয়ে যায়,” বললেন নুসরাত।
তার মানে মনের উপর আগে পুরো নিয়ন্ত্রণ দরকার, তার পর আসবে শরীরের প্রশ্ন৷ মনকে যদি সুস্থ থাকার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে না পারেন, তা হলে ফিটনেস আপনার করায়ত্ত হবে না কোনোদিনই। ডিসিপ্লিন মেনে শরীরচর্চা করতে পারবেন না, আলসেমি গ্রাস করবে৷ খাওয়াদাওয়ার বিধিনিষেধ মেনে চলা তো আরও দুষ্কর হয়ে দাঁড়াবে! যারা ডিপ্রেশনে ভোগেন, তাঁদের অনেকেই মন ভালো রাখার জন্য খাবারের আশ্রয় নেন। ফলে ওজন হু হু করে বাড়তে আরম্ভ করে। আপনি যেন সে ফাঁদে পা দেবেন না!
নুসরাত তাঁর ডায়েটের ব্যাপারে সামান্যতম ঝুঁকি নিতেও রাজি নন। খাবার এবং পানীয়, দুটো ব্যাপারেই তিনি সমান সতর্ক। বলছেন, “শারীরিক ফিটনেসের ক্ষেত্রে আমি পানি খাওয়াকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। প্রচুর পানি খেলে আপনার ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্য ভিতর থেকে ঝলমল করবে।”
শোনা যায়, নুসরাত নাকি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় কাজকর্ম সুষ্ঠুভাবে করার জন্য শরীরের যতটা ক্যালোরি প্রয়োজন, শরীরকে তিনি ঠিক ততটাই দেন, বাড়তি হিসেবের কোনও খাতাই নেই তাঁর জীবনে! কোনও বেলা যদি বেশি ক্যালোরি খেয়ে নেন, তা হলে সেদিনই অন্য খাওয়ায় রাশ টেনে হিসেবটা কড়ায়-গণ্ডায় মিটিয়ে দেন। এত সব কি সত্যি? হাসতে হাসতে নিজেই স্বীকার করে নেন, “ঠিকই শুনেছেন, আমি ক্যালোরি গুনে গুনে খাওয়াদাওয়া করি।
বন্ধুদের সঙ্গে কোথাও বেড়াতে গিয়ে যদি এক চুমুক সফট ড্রিঙ্ক খেয়ে ফেলি, সেটাও আমার কাছে অনেক। এটাই আমার অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। লোকে হাসিঠাট্টা করলেও এই অভ্যাসটা আমি বদলাতে পারব না। সত্যি বলতে কি, বদলাতে আমি চাইও না। কাজের সূত্রে আমাকে একটা নির্দিষ্ট বডি টাইপ ধরে রাখতে হয়, ডায়েট মেনে চললে কাজটা সহজ হয়। আমার ট্রেইনার আর নিউট্রিশনিস্টের পরামর্শের উপর আমি আস্থা রাখি ও খুব গুরুত্ব দিই তাঁদের।”
আপনি কি খান সারাদিনে? “সকালে উঠে খালি পেটে প্রথমে গরম পানি খাই, তাতে একটু লেবুর রস চিপে দিই। আমার আর একটা সিক্রেট আছে। আমি এক বোতল পানির মধ্যে অনেক ফলের স্লাইস দিয়ে সারা রাত রেখে দিই। সব থিতিয়ে যাওয়ার পরে পরের দিন ওই পানিটাই খাই। শরীর ডিটক্সিফাই করার জন্য এই ডিটক্স ওয়াটার খুব কার্যকর। আপনার পছন্দমতো যে কোনও ফল দিয়ে এই পানিটা তৈরি করে নিতে পারবেন। বাঙালি হলেও একটা কথা স্বীকার করে নিচ্ছি যে আমি ভাত খাই না। ভাতের থেকে ওটস বেশি পছন্দ করি। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের স্টু-ও আমার খুব পছন্দের। তা ছাড়া স্যুপ, সালাদ এ সবও খাই।”
কলকাতার বাঙালিরা তবুও কিছুটা হালকা খাবার খান, ঢাকায় কিন্তু মশলাদি খাবারের প্রচলন অনেক বেশি। নুসরাত সেই কারণেই কোনও ঝুঁকি না নিয়ে নিজের বাড়িতে একজন শেফ রেখেছেন। যিনি সমস্ত রান্না তাঁর জন্য বেশ মজাদার ও স্বাস্থ্যকর পদ্ধতিতে বানিয়ে দেন। তা ছাড়া তাঁর খাদ্যতালিকায় ফল তো থাকেই।
শরীর ফিট রাখতে গেলে এর পরেও যেটা করতে হয়, সেটা হচ্ছে নিয়মিত ব্যায়াম। ব্যায়ামের জন্যও বিশেষ রুটিন মেনে চলার পক্ষপাতী তিনি। নুসরাত বলছেন,
“খাওয়াদাওয়া পরিমাণ-মতো করার পাশাপাশি অবশ্যই ব্যায়াম করতে হবে। কারণ ফ্ল্যাট অব এবং বাইসেপস শুধুমাত্র ডায়েটে হবে না। তার জন্য এক্সারসাইজ করা অত্যন্ত দরকারি। আমার নিজের বাড়িতেই জিম রয়েছে। পাশাপাশি একজন ব্যক্তিগত ট্রেইনারও রয়েছেন। কারণ আমি মনে করি যে একজন প্রশিক্ষিত ট্রেইনারের পরামর্শ মেনে ব্যায়াম করলে সেটা অনেক বেশি কার্যকর হয়। নিজে দায়িত্ব নিয়ে কিছু করতে গেলে চোট পাওয়ার বা উলটো ফল হওয়ার আশঙ্কা থাকে, সেই রিস্কটা না নেওয়াই ভালো। আমি তো ট্রেইনারের পরামর্শ ছাড়া এক পা-ও এগোই না।” প্রতিদিন অন্তত দেড় থেকে দু’ঘণ্টা জিমে না কাটাতে পারলে তাঁর মনের মধ্যে খচখচ করে। আরও যোগ করে দিচ্ছেন, “কোনও সময় যদি শুটিং থাকে সে ক্ষেত্রে হয়তো সপ্তাহে সাত দিন ব্যায়াম করে উঠতে পারি না। কিন্তু কম করে চার-পাঁচ দিন তো জিম আমাকে করতেই হবে। আসলে যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাঁদের শরীর রুটিনের পরিবর্তনটা সহজে নিতে পারে না,” যোগ করে দিচ্ছেন নুসরাত।