Now Reading
শ্রীলেখা মিত্র: প্রেম মানেই একসঙ্গে থাকা নয়

শ্রীলেখা মিত্র: প্রেম মানেই একসঙ্গে থাকা নয়

প্রেম মানেই হাত ধরাধরি করে শেষ পর্যন্ত একসঙ্গে থাকা নয়: শ্রীলেখা মিত্র

প্রেম বড়ো না কামনা বড়ো, সেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উপর। কামনা বা যৌনতা যদি ক্ষতিকারক না হয়, যদি পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে ঘটে থাকে, তা হলে কারও কাছে তা অগ্রাধিকার পেতেই পারে। আবার অনেকে মনে করেন, সেক্স বা কামনা তখনই সম্ভব যখন প্রেম আছে। তাঁদের জায়গা থেকে তাঁরাও ঠিক। সবটাই ব্যক্তিবিশেষের দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তাভাবনার উপর নির্ভরশীল।

মনে রাখতে হবে, মানুষ কিন্তু খুব কনফিউজ়ড। আজকের প্রজন্মকে যদি দেখি, তাদের বাবা-মায়েদের কাছেও কিন্তু শারীরিক ঘনিষ্ঠতার ব্যাপারটা অতটা সহজ ছিল না। সবটা নিয়ে একটা লুকোছাপা ছিল, শারীরিক ঘনিষ্ঠতা বলতে গেলে হতই না বা হলেও খুবই কম হত। এখনকার প্রজন্ম কিন্তু বিষয়টা নিয়ে খুব খোলােমলা। এর একটা ভালো দিকও আছে। কাউকে ভালো লাগছে, তাকে সরাসরি বলা যে, আমি তোমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে চাই। এর মধ্যে কোনও প্রেমের ব্যাপার নেই, কোনও প্রতিশ্রুতি বা দায়বদ্ধতাও নেই। বিয়ে, সংসার, এ সবের গল্পই নেই! এটা একটা দৃষ্টিভঙ্গি। যদি দু’জন মানুষ সহমত হন, তা হলে এর মধ্যে আপত্তির তো কিছু নেই! এ ক্ষেত্রে একজন মানুষের কাছে যৌনতাটা শুধু অন্যান্য শারীরিক চাহিদার মতোই আর একটা চাহিদা। শারীরিক চাহিদাটা মিটে গেলেই কাল তুমি তোমার রাস্তায় যাবে, আমি আমার রাস্তায় যাব। আবার যদি পরে কখনও ইচ্ছে হয়, তখন কিছু হলে হবে, না হলে না হবে। এটা একটা প্র্যাকটিকালিটির জায়গা, এটা নিয়ে কোনও সমস্যা নেই।

আজকাল নানা লেখাপত্র হচ্ছে, ইউটিউবেও প্রচুর লিঙ্ক রয়েছে যেখানে বলা হয় লাভমেকিং বা যৌনতার একটা শারীরিক উপকারিতার জায়গা আছে। কেউ হয়তো সেই উপকারিতার দিকটাই মাথায় রাখল, সঙ্গের প্রেমের বাড়তি বোঝাটা নিল না! এটা একটা অ্যাপ্রোচ। আবার অনেকে মনে করেন, এর সঙ্গে একটা প্রেম থাকতে হবে, ভালোবাসা থাকতে হবে। সেটাও ঠিক। কোনটা ঠিক সেটা আমি কে বলার? দুটো মানুষ বেডরুমে আগে শোবে, নাকি আগে প্রেম-ভালোবাসার গল্প করবে, তারপর শোবে, সেটা তাদের ব্যাপার। যতক্ষণ না আপনারা পরস্পরকে শারীরিক বা মানসিকভাবে আঘাত করছেন, ততক্ষণ সেটা ঠিক আছে! কিন্তু বিরোধের জায়গাটা তৈরি হয় যখন একজনের কাছে ব্যাপারটা ঠিক, কিন্তু অন্যজনের কাছে নয়। যতক্ষণ কাউকে তার মতের বিরুদ্ধে কিছু একটা বুঝিয়ে এক্সপ্লয়েটেশনের গল্প না হয়, মিটু-র মতো কিছু না ঘটে, যদি দু’জনের মধ্যে পরিষ্কার একটা বোঝাপড়া থাকে, ততক্ষণ আমার মতে এই ব্যাপারটা যথেষ্টই স্বাস্থ্যকর। এবার তার মধ্যে যদি কারও প্রেম হয়ে যায়, তা হলে ভালো! আসলে প্রেমের সঙ্গে প্যাকেজ হিসেবে অনেক কিছু চলে আসে, যেমন পজ়েসিভনেস, সন্দেহবাতিক যেগুলো ক্ষতি করে দেয়।

এখানে একটা কথা বলার। ভারতীয় তথা বাঙালি সমাজে কামহীন প্রেমকে একটা উঁচু আসনে বসানোর প্রবণতা এখনও কোথাও কোথাও রয়েছে। আমি তাতে বিশ্বাসী নই। প্লেটোনিক প্রেমে আমার কোনও বিশ্বাস নেই। শারীরিক ব্যাপারটা হয় না বলে ও সব প্লেটোনিক লাভের মোড়ক দেওয়া হয়, যেটা আমার মতে ভণ্ডামি। আমাদের দেশেই এটা হয়। একদিকে এখানে কামসূত্র হয়, অন্যদিকে মেয়েদের এটা পরা উচিত না, ওটা করা উচিত না মার্কা নিদানও দেওয়া হয়। কোনও জায়গায় যখন এত ভিন্ন সংস্কৃতি, ভিন্ন ভাবধারার মানুষ থাকেন, সেখানে স্বার্থ বা ভাবনার সংঘাত থাকবেই।

আজকাল সোশাল মিডিয়ায় ওপেন রিলেশনশিপ কথাটা খুব দেখা যায়। ওপেন রিলেশনশিপ মানে একই সঙ্গে একাধিক মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা এবং সেটা নিেয় কোনও লুকোছাপা না করা! আমাদের সাহিত্যে, সিনেমায় এর অনেক উদাহরণ আছে। মনে রাখতে হবে, মানুষ কিন্তু পলিগ্যামাস বাই নেচার! বারবার একটা মানুষকে নিত্যনৈমিত্তিক জীবনে, শোওয়ার ঘরে বারবার দেখতে দেখতে একটা বোরডম আসে। তখন কিন্তু যে মেয়ে এতদিন বাড়ির বউ ছিল, সে কিন্তু একটা ব্যাকলেস ব্লাউজ় পরে ছবি তুলে সোশাল মিডিয়ায় দিয়ে লাইক গোনে, কমেন্ট দেখে! স্বামীর কাছে যে প্রশংসাটা সে পায় না, সেটা সে চায় অন্য লোকে করুক। অন্য জায়গা থেকে পাওয়ার চেষ্টা করে। অনেক বিবাহিত পুরুষও দেখেছি হোয়াটসঅ্যাপ করে নানা গল্প করতে চায় আমার সঙ্গে। আমি নিশ্চিত, তাদের বউরা সে কথা জানে না! আমরা তো সমাজে একটা হিপোক্রেসির মধ্যেই থাকি! তাই ওপেন রিলেশনশিপ যদি সত্যি সত্যি প্র্যাকটিস করা যায়, খুব ভালো!

ব্যক্তিগতভাবে আমি প্রেমে বিশ্বাস করি। তবে প্রেম মানেই যে হাত ধরাধরি করে শেষ পর্যন্ত একসঙ্গে থাকা, তা নয়। সেটা ক্ষণিকের প্রেমও হতে পারে। যতক্ষণ দুটো মানুষ পাশাপাশি আছে, তাদের মধ্যে একটা সততা থাকবে, একটা স্বচ্ছতা থাকবে, একে অপরের সুবিধে বুঝবে, সেটাই তো প্রেম!

What's Your Reaction?
Excited
0
Happy
0
In Love
0
Not Sure
0
Silly
0
View Comments (0)

Leave a Reply

Scroll To Top