করোনা উদ্বেগ: যে সব জিনিস মজুত রাখা উচিত

করোনার আতঙ্ক পুরোদমে ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশে। রাস্তাঘাটে লোকচলাচল কম, মিলছে না হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার, মাস্ক। সরকারি নির্দেশে ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়েছে সমস্ত সিনেমা হল, প্রেক্ষাগৃহ। ভিড় নিয়ন্ত্রণে রাশ টানা হতে চলেছে শপিং মল, বড়ো বাজারগুলোতেও। স্কুল-কলেজ বন্ধ, বহু বেসরকারি অফিসেই চালু হয়ে গেছে ওয়ার্ক ফ্রম হোমের ব্যবস্থা। সচেতনতা প্রসারের চেষ্টা চলছে সর্বক্ষণ। রোগ প্রতিরোধের জন্য বিশ্বের একাধিক দেশে হাসপাতালে অথবা বাড়িতে আইসোলেশনে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে হাজার হাজার মানুষকে।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশে নোভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। অদূর ভবিষ্যতে যদি আপনাকে বা আপনার পরিবারকে গৃহবন্দি অবস্থায় থাকতে হয়, তা হলে তার প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে আগে থেকেই। এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দিষ্ট সতর্কতামূলক নিয়ম রয়েছে। কিন্তু বাড়িতে স্বেচ্ছাবন্দি থাকতে হলে আগে থেকে খাবারদাবার, অন্যান্য অবশ্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মজুত করে রাখা দরকার। তার মানে অবশ্য এই নয় যে ভয় পেয়ে গিয়ে সব জিনিসই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি একগাদা করে কিনে জমিয়ে রাখবেন! মোটামুটি দু’ সপ্তাহ ভালোভাবে চলে যাবে, সেই পরিমাণ জিনিসপত্র, খাবারদাবার কিনে রাখলেই যথেষ্ট!
এর পরে স্বাভাবিক প্রশ্ন হল, কী কী কিনবেন!
শুকনো খাবার: চাল, ডাল, আটা, ময়দা, ঘি, মাখন, তেলের মতো যে সব খাদ্যবস্তু বেশিদিন থাকলেও নষ্ট হয় না, সে সব কিনে রাখুন। ডিম কিনে রাখুন বেশি করে। চিঁড়ে-মুড়ি-চানাচুর-ডালমুট-চিপসের মতো টুকটাক খাবার রাখুন সংগ্রহে। নানারকম বিস্কুট কিনে রাখুন। ফ্রিজে চকোলেট, শুকনো কেক রাখতে পারেন। আর হ্যাঁ, অবশ্যই কিনে রাখবেন চা আর কফি।
ক্যানড ফুড: কৌটোবন্দি খাবার যদি পুষ্টিকর হয়, খেতে কোনও বাধা নেই। তবে কেনার আগে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার তারিখ অবশ্যই দেখে নেবেন। ক্যানে ভরা সবজি বা ফল অনেকদিন পর্যন্ত ভালো থাকে। বিকল্প হিসেবে সবজি বা ফল কেটে এয়ারটাইট কৌটোয় ভরে ফ্রিজে রাখলেও বেশ অনেকদিন ব্যবহার করতে পারবেন।
ফ্রোজ়েন ফুড: বরফে জমানো প্যাকেট করা মাছ-মাংস কিনে এনে ফ্রিজ়ে রেখে দিন। রেডি-টু-ইট খাবারের প্যাকেটও এভাবে রেখে দিতে পারেন। রান্না করতে ইচ্ছে না করলে শুধু গরম করে নিলেই হল! আইসক্রিম বা কোল্ড ড্রিংকও রাখুন স্টকে।
সবজি: শাকসবজি খুব বেশি কিনে রাখবেন না, গরম বাড়লে ফ্রিজে থাকা শাকসবজিও নষ্ট হতে শুরু করবে। বদলে কিনে রাখুন আলু, পেঁয়াজ, আদা, রসুনের মতো সাধারণ সবজি। শুধু পর্যাপ্ত আলু-পেঁয়াজ ঘরে থাকলেই চোদ্দ-পনেরো দিনের কোয়ারান্টাইন কাটিয়ে দেওয়া কোনও ব্যাপার নয়!
কার্টনের খাবার: কার্টনের খাবার কিনলেও এক্সপায়ারি ডেট অবশ্যই দেখে নেবেন। প্যাকেটের দুধ বা ফলের রস ফ্রিজে রাখুন। তবে বেশি করে কার্টনের খাবার রাখার আগে মনে রাখবেন প্যাক খোলার তিনদিনের মধ্যে কিন্তু তা শেষ করে ফেলতে হবে।
শুকনো ফল: কাজু-কিশমিশ-বাদামজাতীয় খাবার স্টকে রাখলে অবসর সময় দিব্যি কেটে যাবে। খেজুর, শুকনো বেরিজাতীয় ফলে প্রচুর ভিটামিন রয়েছে। এ সব খাবার বহুদিন ভালো থাকে। সানফ্লাওয়ার সিড, চিয়া সিড, পাম্পকিন সিড কৌটোয় ভরে রাখুন। বাদাম, সিড আর কিশমিশ মিশিয়ে নিলেই সুস্বাদু আর পুষ্টিকর স্ন্যাকস পেয়ে যাবেন!
সাবান আর ডিসইনফেকট্যান্ট: করোনা থেকে বাঁচার প্রথম ও প্রধান ধাপ হল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা আর সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। সাবান, হ্যান্ডওয়াশ, স্যানিটাইজ়ার, ডিটারজেন্ট পাউডার মজুত রাখুন। তবে অকারণে একগাদা স্যানিটাইজ়ার কিনে রাখবেন না, যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই কিনুন।
শিশুদের সামগ্রী: বাড়িতে শিশু রয়েছে? বেবি ফুড, ডায়াপার, বাচ্চাদের অন্যান্য দরকারি জিনিস অবশ্যই সংগ্রহে রাখুন।
দরকারি ওষুধ: সাধারণ ব্যবহার্য ওষুধ, তুলো, অ্যান্টিসেপটিক হাতের কাছে রাখবেন। যাঁরা নিয়মিত ওষুধ খান, অবশ্যই তা অন্তত দু’ সপ্তাহের মতো কিনে রাখবেন।
আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম: আচমকা তৈরি হওয়া পরিস্থিতির জন্য যথাসম্ভব প্রস্তুত থাকাই ভালো। টর্চ, মোমবাতি, দেশলাইয়ের মতো জরুরি সরঞ্জাম সংগ্রহে রাখুন।
তবে বেশি বাজার করা যাবে না। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী বাজার করুন।