গর্ভাবস্থায় শসা খাওয়ার ঝুঁকি এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি কি ধরনের হতে পারে কিংবা গর্ভাবস্থায় শসা খাওয়া কি নিরাপদ? আর যদি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য শসার স্বাস্থ্যকর উপকারিতা থাকে তাহলে সেগুলো কি? আমাদের আজকের আয়োজন শসা সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের উত্তর:
ওজন হ্রাসের জন্য এবং গ্রীষ্মের সময় এক বিস্ময়কর চিকিৎসার জন্য দুর্দান্ত,বিনয়ী শসার সহিত চোখে দেখার চেয়েও বেশিবার সাক্ষাৎ হয়ে থাকে,বিশেষ করে যখন সেটি গর্ভাবস্থার সময় আসে। পুষ্টিতে পরিপূর্ণ এবং প্রজননে সহায়তাকারী ও মহিলাদের মধ্যে ধারণার হার বিকাশের জন্য পরিচিত হওয়ার পাশাপাশি,শসা হল স্বাস্থ্যকর ডায়েটে একটি স্বাগত সংযোজন,বিশেষ করে গর্ভাবস্থার ক্ষেত্রে।
তবে অনেক গর্ভবতী মহিলা এই চিন্তাই করেন যে এর মধ্যে কি এমন কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে যা আপনার এবং আপনার সন্তানের জন্য সামাণ্য হলেও বিপর্যয়ের সম্ভবনা আনতে পারে?গর্ভাবস্থায় এই আকর্ষণীয় সবজি খাওয়ার ব্যাপারে আপনার যা কিছু জানার প্রয়োজন তার সব কিছুই এখানে রইলঃ
গর্ভাবস্থায় শসা খাওয়া কি নিরাপদ?
মহিলাদের দেহে শসা বেশ কিছু বিশেষ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে,আর সেই কারণেই গর্ভাবস্থায় সাধারণত শসা খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে না। যদি আপনারা জিজ্ঞাসা করে থাকেন যে “গর্ভাবস্থায় আমরা কি শসা খেতে পারি?”চালু ধারণার নিয়মানুযায়ী,আমরা বলব না,পারেন না যদি আপনার মধ্যে নিম্নলিখিত শর্তগুলি থেকে থাকে–
- কোলাইটিস(মলাশয়ে প্রদাহ)
- দীর্ঘস্থায়ী নেফ্রাইটিস(বৃক্কের স্ফীতি এবং প্রদাহ)
- পাইলোনেফ্রাইটিস
- হেপাটাইটিস(যকৃতের প্রদাহ)
- গ্যাসট্রাইটিস
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য শসার স্বাস্থ্যকর উপকারিতাগুলি
যদিও গর্ভাবস্থায় খেতে দেওয়ার ব্যাপারে শসায় কিছু বাধ্যবাধকতা আছে,তবে এতে আবার কিছু জনপ্রিয় স্বাস্থ্যকর উপকারিতা আছে এমন উপাদানগুলির তালিকা এখানে লিপিবদ্ধ করা হল যার দ্বারা আপনার গর্ভাবস্থার ডায়েটে অল্প পরিমাণে হলেও শসাকে সংযুক্ত করার কথা বিবেচনা করা যেতে পারে,বিশেষ করে যদি আপনি একজন শসা প্রেমী হয়ে থাকেন।
১. কম মাত্রায় ক্যালোরি: শসা খাওয়ার কারণে ওজন বৃদ্ধি– প্রায় অসম্ভবের কাছাকাছি। এটি স্থূলতা প্রতিরোধ করে এবং আপনাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য পূর্ণ বোধ করিয়ে রাখে। এই সবজিটিতে কত ক্যালোরি রয়েছে তা জানতে চান?সেগুলির খোসা সহযোগে আধ কাপ পরিবেশনের মধ্যে রয়েছে কেবল 8 ক্যালোরি!
২. ভিটামিন K: স্বাস্থ্যকর এবং শক্তিশালী হাড়ের জন্য একটি অপরিহার্য পুষ্টিকর উপাদান হল ভিটামিন K। শসায় ভিটামিন K এর সাথে আরও রয়েছে হৃদপিন্ড এবং মস্তিষ্কের জন্য স্বাস্থ্যকর B ভিটামিনগুলি,আয়রণ,ফলিক অ্যাসিড এবং ম্যাগনেসিয়াম।
৩. পানি বিয়োজন প্রতিরোধ করে: শসায় থাকা প্রচুর পরিমাণে তাজা বিশুদ্ধ পানির কথাই আমরা বলছি। পানি বিয়োজনের কারণে ইলেক্ট্রোলাইটের অসাম্যতার ব্যাপারে আপনার চিন্তা করতে হবে না কারণ শসা এর যত্ন নেবে।
৪. ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়: আপনি যদি আপনার প্রথম ত্রৈমাসিকে অবস্থান করেন তবে আমরা আপনার কোলাজেন গ্রহণের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য এবং আপনার ইতিমধ্যে আকস্মিক প্রশস্তকরণের জন্য ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে কিছুটা শসা সংযুক্ত করার পরামর্শ দিচ্ছি।
৫. ফুলে যাওয়া প্রতিরোধ করে: শসাগুলি হল একটি প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক এবং এছাড়াও এটি আবার দেহের ফোলাভাব দূর করে।
৬. মেজাজের উন্নতি ঘটায়: শসার মধ্যে পাওয়া B-ভিটামিনগুলি “ভাল অনুভূতি” ভিটামিন হিসাবে পরিচিত যা মস্তিষ্কের জন্য ভাল এবং আপনার মেজাজের উন্নতি ঘটাতে সহায়তা করে।
৭. ভ্রূণের বিকাশ ঘটায়: আসুন যে ঘটনাটি ভুললে চলবে না,শসার মধ্যে রয়েছে ভিটামিন C,B-1,B-2,B-3, ফোলিঅ্যাসিড,জিঙ্ক,পটাসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম এবং আয়রণ–এই সবগুলিই ভ্রূণের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয়,এইভাবে শসা বৃদ্ধির অস্বাভাবিকতা প্রতিরোধ করে।
৮. কোষ্ঠকাঠিণ্যকে বিদায়: শসার মধ্যে উচ্চ মাত্রায় ফাইবার রয়েছে,যার অর্থ হল আপনার গর্ভাবস্থায় আর কোনও কোষ্ঠকাঠিণ্য বা অর্শের পর্যায় নেই!
৯. অনাক্রম্যতা বৃদ্ধি করে: গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ শসা আপনার অনাক্রম্যতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং গর্ভাবস্থায় আপনার সংক্রমণগুলিকে প্রতিরোধ করে।
১০. রক্ত শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে: যদি আপনার গর্ভাবস্থাকালীন ডায়াবেটিস ধরা পড়ে তবে আপনাকে শসা খেতে দেওয়ার কথা বিবেচনা করা যেতে পারে,যেহেতু এটি শরীরের রক্তচাপ এবং শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
গর্ভাবস্থায় শসা খাওয়ার ঝুঁকি এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি
১.অন্ত্রে গ্যাস: গর্ভাবস্থায় শসা খাওয়া থেকে হওয়া এটি একটি অতিসাধারণ সমস্যা। এটি ছাড়াও আপনি আবার বদ হজম এবং ঢেকুর ওঠাও হয়ত অনুভব করতে পারেন।
২.ঘন ঘন মূত্রত্যাগ: আপনি হয়ত মাঝেমধ্যে প্রায়শই আপনার মূত্রশয়টি পূর্ণ হয়ে ওঠা অনুভব করে থাকতে পারেন,যা আপনাকে ঘন ঘন মূত্র ত্যাগের দিকে পরিচালিত করে। আপনার গর্ভাবস্থার কোন ত্রৈমাসিকে আপনি অবস্থান করছেন তার উপর নির্ভর করে এটি আপনার অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠতে পারে।
৩. অ্যালার্জি: আপনি যদি শসার প্রতি অ্যালার্জিপ্রবণ হয়ে থাকেন,তবে আপনি হয়ত চুলকানি বা ফুলে যাওয়া অনুভব করে থাকতে পারেন।
৪. বিষক্রিয়া: কিউকারবাইটেসিন এবং টেট্রাসাইক্লিক ট্রাইটারপেনয়েডের মত বিষাক্ত পদার্থগুলি শসার মধ্যে থাকে,আর সেই কারণেই এগুলি তেতো স্বাদের অধিকারী হয়ে থাকে। যখন খুব বেশি পরিমাণে শসা খাওয়া হয়ে থাকে তখন এগুলির মধ্যস্থ টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থগুলি জীবনঘাতী হয়ে উঠতে পারে।
৫. হাইপার্কলেমিয়া হতে পারে: অত্যধিক পরিমাণে খাওয়া হলে,শসা মধ্যস্থ উচ্চ পটাসিয়াম সামগ্রীটির জন্য পেটে খিঁচুনি হতে পারে,পেট ফেঁপে যেতে পারে এবং এমনকি কিডনির উপরেও প্রভাব পড়তে পারে।
খাওয়ার উপযোগী করে শসাকে প্রস্তুত করার জন্য পরামর্শগুলি
আপনার ডাক্তারবাবু যদি গর্ভাবস্থায় আপনাকে শসা খাওয়ার জন্য সবুজ আলো দেখিয়ে থাকেন তবে এটির উপকারিতাগুলি উপভোগ করার সময় এসেছে। সুস্বাদু খাদ্যের জন্য শসাকে প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে একগুচ্ছ পরামর্শ রইল এখানে আপনার জন্য–
১.সম্পূর্ণরূপে ধুয়ে নিতে হবে: শসার সাথে আসা ধূলো,ময়লা এবং রাসায়নিকগুলিকে ভালভাবে ধুয়ে অপসারিত করা নিশ্চিত করুন। দোকান থেকে ক্রয় করা শসাগুলিকে সরাসরি খাবেন না। খাওয়ার পূর্বে সেগুলিকে ভালভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন।
২. স্যালাড এবং স্মুদিগুলিতে অন্তর্ভূক্ত করুন: আপনার স্যালাড এবং স্মুদিগুলিতে শসা হল একটি দুর্দান্ত সংযোজন। আপনি যদি ডেটক্স স্মুদি বা শেকগুলি পান করে থাকেন তবে আপনি সেগুলির সাথে শসা সংযোগ করতে পারেন।
৩. কাঁচা খান: ভাল করে খোসা ছাড়িয়ে তার উপর সামাণ্য লবণ যোগ করে শসার টুকরোগুলিকে ফ্রীজের ভিতরে রেখে ঠাণ্ডা করে নিন। যদি আপনি কাঁচা শসা খেতে পছন্দ করে থাকেন তবে সেক্ষেত্রে এটি হয়ে উঠবে একটি ‘কুল কিউকাম্বার ক্লাসিক‘!
৪.সেগুলিকে স্যান্ডুইচে ব্যবহার করুন: শসা এবং টমেটো স্যান্ডুইচের মধ্যে কোনটি?আপনি আবার এমনকি শসাগুলিকে ভাপিয়ে নিয়ে সেগুলিকে বার্বিকিউ জাতীয় খাদ্যগুলির সাথে এবং অন্যান্য সুস্বাদু মুখরোচকগুলির সাথেও সমৃদ্ধ করে তুলতে পারেন। এগুলি আবার চাট অথবা স্ন্যাক্স হিসেবেও ভালই কাজ করে।
৫. একটি ব্লেন্ডার ব্যবহার করুন: যদি আপনি শসার জুস খাওয়ার পরিকল্পনা করে থাকেন,তবে একটি ব্লেন্ডার নিয়ে তার মধ্যে শসা সহ আরও অন্যান্য ফল এবং সুস্বাদু সবজিগুলিকে নিয়ে একত্রে হুইপ করে নিয়ে একটি মসৃণ স্মুদি বানিয়ে নিন। এটি আপনার জন্য বেশ ভাল এবং গর্ভাবস্থায় এটি একটি যাদুমন্ত্রের মত কাজ করে।
গর্ভবতী মায়েদের শসা সম্পর্কিত প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
রাত্রিবেলায় শসা খাওয়াটা কি নিরাপদ?
হ্যাঁ,আপনার নৈশভোজের পাশাপাশি শসা রাত্রেও নিরাপদে খাওয়া যেতে পারে। তবে মনে রাখবেন যে,এর মধ্যস্থ উচ্চ জলীয় উপাদান স্বাভাবিকের তুলনায় আপনার মূত্রাশয়কে বেশি পূর্ণ করে রাখতে পারে যার ফলে আপনি ঘন ঘন মূত্র ত্যাগ করার মত অনুভূতিবোধ করতে পারেন। এটি আপনার ঘুমকে ব্যহত করবে যা আরও অন্যান্য সমস্যাগুলি সৃষ্টি করতে পারে। এটি যাতে না ঘটে তার জন্য আপনি একটু আগে আগে আপনার নৈশভোজটি সেরে নিতে পারেন অথবা আপনার ঘুমানোর 3-4 ঘন্টা আগে শসা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
শসাগুলিকে মজুত করে রাখার সবচেয়ে সেরা উপায়টি কি?
আপনার শসাগুলিকে তাজা রাখা নিশ্চিত করার সবচেয়ে সেরা উপায়টি হল সেগুলিকে ফ্রীজের ভিতরে সংরক্ষিত করা। আপনি একটি জিপলক ব্যাগের ভিতরে অথবা সবজি রাখার বিশেষ ধরনের ব্যাগের মধ্যে করে এগুলিকে ফ্রীজের ভিতরে মজুত রাখতে পারেন, দীর্ঘ সময় ধরে এগুলির আদ্রতা ধরে রাখার জন্য এবং শসাগুলি নরম হয়ে কুঁচকে যাওয়া প্রতিরোধ করার অন্য।
কিভাবে আমি তাজা শসাগুলিকে বেছে নেব?
নরম হয়ে কুঁচকে যাওয়া শসাগুলির বদলে যেগুলি বেশ দৃঢ় সেগুলিকেই বেছে নিন। শসার খোসার দিকটি অথবা সম্পূর্ণ শসাটিই যাতে কোনওরকম থ্যাঁতলানো বা দাগায়িত না হয়ে থাকে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখুন। হালকা ওজনের শসাগুলিকে চয়ন করা এড়িয়ে চলুন। শেষ অবধি গাঢ় ত্বকযুক্ত শসাগুলিরই সন্ধান করুন। শসার খোসাগুলি যত গাঢ় হবে তত বেশি পুষ্টিকর হবে।
যদিও শসাগুলি দুর্দান্ত তবে আপনি যদি গর্ভবতী হয়ে থাকেন আপনার চিকিৎসাগত অবস্থা এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে সেগুলি আবার ক্ষেত্র বিশেষে আপনার পক্ষে খারাপও হতে পারে। আমরা শসাগুলির উপর কোনও রূপ আঘাত হানছি না,আমরা কেবল বলছি যে এগুলি খাওয়ার পূর্বে যথাযথ সাবধানতা অবলম্বন করুন এবং আগু পিছু সব দিক ভেবে নিজের যত্ন নিয়ে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নিন। আপনি যদি গর্ভবতী হয়ে থাকেন তবে সেক্ষেত্রে শসা আপনার খাওয়ার জন নিরাপদ কিনা তা জানার জন্য আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে কথা বলুন।