আপনার হাতের কাছে নিজস্ব ফার্স্ট এইড কিট আছে তো?

বিদ্যেটা আমরা সবাই শিখেছিলাম স্কুলবেলায়। পুরোনো জুতোর বাক্সে ফার্স্ট এইড বক্স তৈরি করেননি, এমন কেউ আছেন নাকি? কিন্তু তার পর জীবন এতটাই সহজ হয়ে গেল, যে সে সব উঠে গেল আলমারির মাথায়। ধুলো পড়ে তার এমন অবস্থা হয়েছে যে, তা দিয়ে চিকিৎসার কাজ হতে পারে, এ কথা কারও মাথাতেই আসবে না। হাত বাড়ালেই ডাক্তার, ওষুধপত্র। সামান্য কেটে-ছড়ে গেলেও ঝাঁ চকচকে হাসপাতালে টিটেনাস নিতে চলে যাওয়ার আগে আমরা দু’বার ভাবিনি এই কিছুদিন আগেও।
কিন্তু আপাতত যা পরিস্থিতি, তাতে হাসপাতাল বলুন বা পাড়ার ডাক্তারের চেম্বার, নিরাপদ নয় কোনওটাই। বার বার বলা হচ্ছে, সাধারণ সমস্যায় ডাক্তারের থেকে পরামর্শ নিন ফোনে। কিন্তু ধরুন, আপনার হাত সবজি কাটতে গিয়ে কেটে গিয়েছে বিচ্ছিরিভাবে। ডাক্তার বললেন, জায়গাটা পরিষ্কার করে ধুয়ে নিয়ে অ্যান্টিসেপটিক লাগিয়ে হালকা একটা ব্যান্ডেজ বেঁধে রাখুন — ব্যান্ডেজ বাঁধার উপায় আছে আপনার কাছে? বা কারও পেটের অবস্থা খারাপ, বারবার বাথরুম যেতে হচ্ছে। ডাক্তার বলেছেন নিয়মিত ওআরএস খেতে হবে, এদিকে ওষুধের দোকানে ওআরএস মিলছে না। তখন কী করবেন? এম এসসি নার্সিংয়ের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী সোহিনী ভট্টাচার্যের পরামর্শে আপনাদের জন্য একটি সহজ তালিকা তৈরি করেছি আমরা। কাছাকাছি বাজার বা ওষুধের দোকানে মিলবে সবই।
প্রথমেই একটি পরিষ্কার বাক্স নিন, সেখানে থাকবে একটি থার্মোমিটার, তুলো, কাঁচি — একটি লাগবে ব্যান্ডেজ কাটার কাজে, অন্যটি ছোটো স্টিলের কাঁচি — এটি প্রয়োজন হলে স্টেরিলাইজ করতে হতে পারে। স্পিরিট কিনে নিন, না পেলে কোনও অ্যান্টিসেপটিক লিকুইড লাগবে। লম্বা একটা চিমটে থাকলে ভালো, তা হলে গলায় মাছের কাঁটা বা পায়ের তলায় কিছু ফুটে গেলে তুলে ফেলতে পারবেন। লাগবে বেটাডিন সলিউশন আর সিলভার নাইট্রেট মলম। গজ পেলে ভালো হয়, না হলে নরম কাপড় কেটে টুকরো করে কেচে নিন। অ্যান্টিসেপটিকে ডুবিয়ে রোদে শুকিয়ে রাখুন। রাখবেন থার্মোমিটারও।
কেটে গেলে পরিষ্কার করে যদি ডাক্তারবাবু তুলো লাগিয়ে খোলা রাখার পরামর্শ দেন, ঠিক আছে। না হলে পরিষ্কার কাপড় বেঁধে রাখুন। ফ্রিজে সব সময় ঠান্ডা পানি বা বরফ রাখুন। পুড়ে গেলে আগে ঠান্ডা পানি বা বরফ দিতে হবে। ব্যথা লাগলে বা চোট পেলেও ঠান্ডা পানি বা বরফের প্যাক দেওয়াই নিয়ম। আর জায়গাটা একেবারে বিশ্রামে রাখতে হবে। ব্যথা বা ফোলা ধীরে ধীরে কমবে। মচকে গেলে জায়গাটা একেবারে নাড়াচাড়া করবেন না। খুন্তি বা পরিষ্কার লাঠির সাপোর্ট দিয়ে সোজা করে বেঁধে রাখুন যতক্ষণ না ডাক্তারের কাছে যাওয়া হচ্ছে।
ওআরএস বানানোর নিয়ম জানেন তো? এক লিটার জল ২০ মিনিট ধরে ফুটিয়ে নিন, তার মধ্যে আট চাচামচ চিনি আর আধ চাচামচ নুন মেশান। তার পর সেটা ঠান্ডা করে এক দিনের মধ্যে খেয়ে ফেলুন। আর কোনও ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।