ওজন বেশি? কোভিড 19 থেকে বাঁচতে বাড়তি সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন ডাক্তাররা

প্রায় প্রতিদিনই কোভিড 19 সংক্রান্ত নতুন নতুন তথ্য উঠে আসছে প্রকাশ্যে। যে কোনও নতুন ব্যাধির ক্ষেত্রে অবশ্য সেটাই স্বাভাবিক। যত দিন যাবে, তত বেশি গবেষণা হবে এবং আমাদের সামনে উন্মোচিত হবে তার আসল চেহারা। তবে একেবারে সাম্প্রতিক যে সংবাদটি ভুরুতে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিতে পারে, তা হল ওবেসিটি বা বাড়তি ওজন যাঁদের আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে এই রোগ খুব দ্রুত গতিতে বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে।
বি এম বিড়লা হার্ট রিসার্চ সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত কনসালট্যান্ট কার্ডিওলজিস্ট ডা. ধীমান কাহালি বলছেন, “আপাতত আমাদের হাতে উহানের সংক্রমণ ও মৃত্যুহার সংক্রান্ত যে সব তথ্য এসেছে, তাতে দেখা গিয়েছে যে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে 60 শতাংশের হাই ব্লাডপ্রেশারের সমস্যা ছিল, 42 শতাংশ ভুগতেন ডায়াবেটিসে, 23 শতাংশ ছিলেন ওবিস, 23 শতাংশের সমস্যা ছিল বাড়তি কোলেস্টেরল, 8-10 শতাংশের সমস্যা ছিন কিডনি বা হৃদযন্ত্রে। বিশ্বের নানা প্রান্তে হওয়া গবেষণার ফলও মোটামুটিভাবে এই রকমই। একথা খুব ঠিক যে, ওবিস পেশেন্টরা এই রোগে আক্রান্ত হলে পরিস্থিতি খুব দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে বেরিয়ে গিয়েছে। তাই আমরা বার বার সবাইকে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার পরামর্শ দিচ্ছি।”
বাড়তি ওজন তো নিশ্চিতভাবেই একটা সমস্যার জায়গা। তার পর যবে থেকে লকডাউন শুরু হয়েছে, তবে থেকে যে হারে খাওয়াদাওয়া চলছে এবং সোশাল মিডিয়া ভেসে যাচ্ছে জমাটি রান্নার পোস্টে, সেটাও চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মতো ভয়ানক। “সেই সঙ্গে আমরা অনেকের ক্ষেত্রেই দেখছি তাঁরা পানি কম খাচ্ছেন, পুরো দিনের অনেকটা সময় বসে কাটাচ্ছেন এবং খিদে না পেলে বা ইচ্ছে না থাকলেও বাড়ির সকলকে সঙ্গ দিতে গিয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খেয়ে ফেলছেন। সেটাও বন্ধ করতে হবে পরিস্থিতির রাশ হাতে রাখতে গেলে’’, বলছেন পুষ্টিবিদ যাজ্ঞসেনী আম্বলি।
এ বিষয়ে কোনও সন্দেহই নেই যে যত বেশি খাবেন, তত দ্রুতহারে ওজন বাড়তে বাধ্য। খিদে না পাওয়া পর্যন্ত খাবেন না। প্রতিদিন 10-12 গ্লাস পানি খাওয়াটাও একান্ত জরুরি। বিকেলবেলা একগাদা ভাজাভুজি খেয়ে ফেললেন, রাতের খাবার খেলেন অনেক দেরিতে। আবার বেলায় ঘুম থেকে উঠে পানি খাবারের পাট চুকলো দুপুর গড়িয়ে, খানিক বাদেই আবার বসে পড়লেন ভাতের পাতে, ওসব চলবে না একেবারেই। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরুন পুরোনো রুটিনে। যাঁরা দুপুরে ভাত খেয়ে উঠে ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যেস তৈরি করেছেন, তাঁরাও সাবধান। এত কম অ্যাকটিভিটি কারও রোজের রুটিন হতে পারে না।
ডা. কাহালি রোজ কিছু ব্যায়াম করার পরামর্শও দিচ্ছেন সেই সঙ্গে, “প্রাণায়াম করুন, সিংহক্রিয়া, কপালভাতি অভ্যেস করতে পারলেও খুব ভালো হয়। চেষ্টা করুন যেন ওজন, সুগার, প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। যাঁদের শরীর মোটের উপর সুস্থ, তাঁদের এই রোগ তেমন কাবু করতে পারছে না। খুব হিসেব করে খান। এখন থেকে সাবধানে পা ফেলার এবং সুস্থ, নীরোগ জীবন কাটানোর অভ্যেস গড়ে তুলতে পারলে খুব ভালো হয়। কারণ এ কথা খুব ঠিক যে, আগামী বেশ কিছুদিন আমাদের এই রোগটির সঙ্গে লড়াই করতে হবে। তাই সাবধানের মার নেই – এই আপ্তবাক্য মাথায় রেখে চলুন।”