আয়ুর্বেদের পথে খুঁজে নিন সৌন্দর্যের চাবিকাঠি

আমরা সকলেই জানি আয়ুর্বেদের মতো প্রাচীন বিজ্ঞান যে শুধু মানবশরীরকে একটি প্রাকৃতিক ও সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করে তাই নয়, পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি সুস্বাস্থ্যও এনে দেয় যার ফলাফল দীর্ঘস্থায়ী। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা সে কথা ভুলে গিয়ে চটজলদি ফলাফল পেতে রাসায়নিক উপায়ই বেছে নিই। কিন্তু জানেন কি, শরীরের সুস্থতা রক্ষায় আয়ুর্বেদ কীভাবে কাজ করে? আসুন দেখে নেওয়া যাক আয়ুর্বেদিক ভেষজ, খাদ্য, নিয়ম এবং জীবনশৈলীর কিছু শ্রেষ্ঠ কৌশল যা আমাদের চুল আর ত্বক তো সুন্দর করে তোলেই, সামগ্রিকভাবে সুস্থ থাকতেও সাহায্য করে।

আপনার শরীরে ত্বকের মাধ্যমেও খাবার পৌঁছোয়…
একটা কথা আমরা প্রায়ই মনে রাখি না। সেটা হল, ত্বকে এবং চুলে রাশিরাশি কেমিক্যালের ব্যবহার আমাদের শরীরের আভ্যন্তরীণ কার্যকলাপকেও প্রভাবিত করে। প্যারাবেনের মতো এই সব রাসায়নিক যে শরীরের কতটা ক্ষতি করে সে সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করার প্রয়োজন আছে, কারণ আপনি শরীরের বাইরের অংশে যা যা লাগান আপনার ত্বক আর টিস্যু সে সব শুষে নেয়। আয়ুর্বেদের মতো ৫০০০ বছরের পুরোনো বিজ্ঞান এই বিষয়টি সম্পর্কে সম্যক ওয়াকিবহাল এবং সেজন্যই যে কোনও ধরনের সৌন্দর্যরক্ষা বা চিকিৎসার প্রয়োজনে আয়ুর্বেদে একটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।
চুলের জন্য ম্যাজিক ভেষজ:
ভৃঙ্গরাজ
দুর্দান্ত কিছু গুণের জন্য ভৃঙ্গরাজকে চুলের রাজা বলা হয়। ভৃঙ্গরাজ চুল ঠান্ডা রাখে, চুলের দ্রুত বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, অকালপক্বতা রোধ করে এবং চুলে বাড়তি উজ্জ্বলতা ও ঝলমলেভাব এনে দেয়।
শ্বেতকূটজা
সুস্থ চুলের গোড়ার কথা হল সুস্থ স্ক্যাল্প। মাথার ত্বক অর্থাৎ স্ক্যাল্পের সাধারণ বেশ কিছু সমস্যার সমাধান করতে সিদ্ধহস্ত এই ভেষজটি। এর অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল গুণ মাথার ত্বক সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
আমলা
আমলা ভিটামিন সি-তে ভরপুর এবং এতে পর্যাপ্ত অ্যান্টি-অক্সিডান্টও রয়েছে যা চুলের স্বাভাবিক ক্ষয়ক্ষতি মেরামত করতে পারে।

আমলকি
ত্রিফলার অন্যতম উপাদান আমলকি এবং অত্যন্ত কার্যকর। শরীরের যাবতীয় টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে আমলকি এবং এর প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডান্ট নানা ক্ষয়ক্ষতি সারিয়ে তুলতে পারে।
ব্রাহ্মী
চুল ওঠা প্রতিরোধ করতে ও মাথায় রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে ব্রাহ্মী। ব্রাহ্মীর দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার স্ক্যাল্প টিস্যুকে মজবুত করে তোলে যা চুলের সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নত রাখতে সাহায্য করে।
দ্রাক্ষা
মাথায় তেলের উৎপাদনে ভারসাম্য বজায় রাখে দ্রাক্ষা এবং চুলে বাড়তি জেল্লা এনে দেয়।
ভার্জিন কোকোনাট অয়েল
সাধারণ নারকেল তেল আর ভার্জিন কোকোনাট অয়েলের মধ্যে একটা বড়ো পার্থক্য রয়েছে। ভার্জিন কোকোনাট অয়েল কোল্ড প্রেস পদ্ধতির সাহায্যে নিষ্কাশন করা হয় যা তেলের সবটুকু গুণ বজায় রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু সাধারণ নারকেল তেল চড়া উত্তাপের সংস্পর্শে আসে যা তেলের বহু পুষ্টিগুণ নষ্ট করে দেয় এবং তেলের কার্যকারিতাও কমিয়ে দেয়।

আপনার চুলের ম্যাজিক খাদ্যতালিকা:
বাদাম
আমন্ড, আখরোট, কুমড়োর বীজ, নারকেল এবং চিনেবাদাম চুলের জন্য বিশেষ উপকারী খাদ্য কারণ এদের প্রতিটিই ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডে ভরপুর। আয়ুর্বেদ অনুযায়ী সন্ধের দিকে বাদাম খাওয়া উচিত কারণ ওই সময়ই শরীরের ক্ষয়ক্ষতি সারিয়ে তোলার স্বাভাবিক প্রক্রিয়াটি শুরু হয়।

মশলা
প্রতিটি ভারতীয় গৃহস্থবাড়িতেই হলুদ, গোলমরিচ, কারিপাতা, সরষের মতো সাধারণ কিছু মশলাপাতি মজুত থাকে। চুলে শক্তি পৌঁছে দেওয়ার জন্য এই সব মশলা বিশেষ কার্যকরী। রান্না নামিয়ে ফেলার আগে তাতে কিছু কারিপাতা দিয়ে দিন। তাতে পাতার তরতাজাভাব বজায় থাকবে, রান্নাতে আলাদা স্বাদ আসবে আর আপনার তরিতরকারি ও সবজির পুষ্টিগুণও অনেকটাই বেড়ে যাবে।
সবুজ শাকসবজি
ঝলমলে সুন্দর ত্বক আর চুল চাইলে সবুজ শাকসবজিকে খাদ্যতালিকায় রাখতেই হবে। সবুজ শাকসবজিতে পর্যাপ্ত আয়রন, ভিটামিন এ এবং সি থাকে যা শরীরে এনার্জির জোগান দেয় এবং স্বাস্থ্যরক্ষার জন্যও খুবই প্রয়োজন। আয়রন চুলের ফলিকলে অক্সিজেন পৌঁছে দেয় এবং ভিটামিনের অ্যান্টি-অক্সিডান্ট দ্রুত চুলের ক্ষয়ক্ষতি মেরামত করে, ফলে চুল ভঙ্গুর ও দুর্বল হয়ে যেতে পারে না।

চুলের জন্য ম্যাজিক প্রক্রিয়া
তেল মাখা
ভৃঙ্গরাজ বা নারকেল তেলের মতো জরুরি তেল ব্যবহার করে গরম অয়েল মাসাজ নিতে পারলে তা একদিকে মানসিক চাপ কমিয়ে রক্ত সংবহনে সাহায্য করে এবং অন্যদিকে স্ক্যাল্পে ও চুলে আর্দ্রতা পৌঁছে দেয়। এই সব তেল মাথায় শোষিত হয়ে সারা শরীরে তাদের পুষ্টিগুণ ছড়িয়ে দেয়। তবে প্রাকৃতিক, প্যারাবেনহীন, কোল্ড প্রেসড তেলই ব্যবহার করবেন যাতে তেলের সম্পূর্ণ পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা বজায় থাকে। সবচেয়ে প্রাকৃতিক ও কার্যকর ফলাফল পেতে ইন্দুলেখা ভৃঙ্গ তেলই ব্যবহার করুন।
শিরোধারা
এই আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা পদ্ধতিটিতে কপালের উপর ধীরে ধীরে গরম তেল ঢালা হয়। এর ফলে মানসিক চাপ, শারীরিক ক্লান্তি দূর হয়ে যায়, এবং চুল ও স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। একমাত্র পেশাদার থেরাপিস্টই এই পদ্ধতিটি করাতে পারেন, তাই নিয়মিতভাবে হয়তো আপনি শিরোধারা নিতে পারবেন না। কিন্তু একবার নিলেই বুঝতে পারবেন সময়ের যথাযথ সদ্ব্যবহার করতে এর চেয়ে ভালো কিছু আর হতেই পারে না।

ত্বকের জন্য ম্যাজিক ভেষজ
চন্দন
চন্দন সহজেই পাওয়া যায় এবং ত্বক উজ্জ্বল ও শীতল করতে চন্দন যে কতটা কার্যকর, তা অনেকেরই জানা। শুধু তাই নয়, ত্বকের অসমান রং, দাগছোপ কমাতেও চন্দন খুবই কাজের এবং সানট্যান কমাতে ও রোদে পোড়া ত্বক সারাতেও চন্দন সাহায্য করে।
বুনো হলুদ /কস্তুরী হলুদ
হলুদের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ রয়েছে, ফলে ব্রণ, এমনকী ব্রণর দাগছোপ কমাতেও হলুদ দারুণ কাজ করে। ত্বকের সার্বিক সুস্থতা বজায় রাখার পাশাপাশি ত্বক উজ্জ্বল রাখতেও সাহায্য করে হলুদ। সাধারণ হলুদ আর কস্তুরী হলুদের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল কস্তুরী হলুদ ব্যবহার করলে ত্বকে হলুদ ছোপ পড়ে না যা সাধারণ হলুদ ব্যবহার করলে পড়ে।
জাফরান
আপনার রান্নাঘরের অত্যন্ত জরুরি উপাদান এই জাফরান। পটাশিয়ামে ভরপুর জাফরান ত্বকের ক্ষয়ক্ষতি সারায় এবং ত্বক নতুন করে তৈরি করতে সাহায্য করে। জাফরানের অ্যান্টি-অক্সিডান্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ বয়সের থাবা দূরে রাখতে ও ব্রণ নির্মূল করতেও সাহায্য করে। আপনার প্রতিদিনের ত্বকের প্যাকে জাফরান ব্যবহার করলে দেখতে পাবেন ত্বক কেমন নিমেষে উজ্জ্বল হয়ে উঠছে!
মঞ্জিষ্ঠা পাউডার
মঞ্জিষ্ঠা ত্বক শুদ্ধ করে এবং ক্ষয়ক্ষতি সারিয়ে তোলে, ফলে ফেসপ্যাকের জন্য মঞ্জিষ্ঠা অত্যন্ত ভালো একটি উপাদান। মুখের যে কোনও দাগ হালকা করতে বা ত্বকের ছোটখাটো সংক্রমণ, ব্রণর ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ও ব্রণর দাগ কমাতে মঞ্জিষ্ঠা পাউডার ব্যবহার করুন।
গোলাপের পাউডার
সৌন্দর্যচর্চার ক্ষেত্রে গোলাপের গুণ বহু শতাব্দী ধরে পরিচিত, একাধিক মহাদেশে গোলাপ রূপচর্চায় ব্যবহৃত হয়। গোলাপের পাপড়ির পাউডার ত্বক নিমেষে তরতাজা, শীতল ও উজ্জ্বল করে তুলতে পারে। গোলাপের অ্যান্টি-অক্সিডান্ট ফ্রি রাডিক্যালের হামলা প্রতিহত করে, ফলে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়া অনেকটাই ব্যহত হয়।
অ্যালো ভেরা
এটি একটি অল-পারপাস সুদিং জেল৷ সংবেদনশীল ত্বকে অ্যালো ভেরা বিশেষ কার্যকর, ছোটখাটো কাটা বা পোড়াতেও ভালো কাজ করে অ্যালো ভেরা৷ এটি ত্বকে সহজেই শুষে যায়৷ পুরু করে লাগালে এটি ময়শ্চারাইজ়ার বা ফেসপ্যাক হিসেবেও দুর্দান্ত৷ সংবেদনশীলতার কারণে ত্বক চট করে লাল হয়ে গেলে খুব ভালো কাজ দেয় অ্যালো ভেরা কারণ এতে জ্বালাপোড়া কমিয়ে ত্বক শীতল করার গুণ রয়েছে৷
নিম
এটি একটি ওষধিগুণ সম্পন্ন ভেষজ৷ নিমের ত্বক বিশুদ্ধকারী ও ছত্রাক সংক্রমণরোধী উপাদান ব্রণ কমাতে সাহায্য করে৷ ত্বকে কোনও সমস্যা দেখা দিলে বা ব্রণ হলে ওই জায়গায় নিম তেল বা নিমের পাউডার লাগাতে পারেন৷

আপনার ত্বকের ম্যাজিক খাদ্যতালিকা:
লেবু
বয়স কমাতে চাইছেন? সালাডে লেবুর রস বা খাওয়ার পরে এক গেলাস লেবুর জল আপনার মুখ থেকে বয়সের দাগছোপ সফলভাবে মুছে দিতে পারে৷ লেবুর ভিটামিন সি আর অ্যান্টি-অক্সিডান্টের গুণ শুধু হজমশক্তিকেই সাহায্য করে না, উপরন্তু ত্বকের বলিরেখা ও শুষ্কভাবও কমায় যা ত্বক বয়স্ক দেখানোর দুটি মূল কারণ৷
ঘি
বাড়িতে তৈরি অথবা ভালোমানের অর্গানিক ঘি নানারকম পুষ্টিগুণে ভরপুর৷ ঘি ও তার সমস্ত জরুরি ফ্যাটি অ্যাসিড হজমে সাহায্য করা থেকে শুরু করে ত্বক আর্দ্র ও উজ্জ্বল রাখতে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যরক্ষায় সাহায্য করে৷
আমন্ড
ভিটামিন ই ও অ্যান্টি-অক্সিডান্টের ভাঁড়ার আমন্ড৷ চটজলদি সুন্দর হয়ে উঠতে ব্যাগে সারাক্ষণ রেখে দিন আমন্ডের মতো ম্যাজিক খাদ্য!
ডাবের জল ও শাঁস
অনেকেই মনে করেন ডাবের শাঁস ওজন বাড়িয়ে দেয়৷ কিন্তু এই ধারণা ভুল৷ ডাবের শাঁস বরং বিপাকীয় ক্রিয়া জোরদার করে তুলে ওজন কমাতেই সাহায্য করে৷ ডাবের অ্যান্টি-অক্সিডান্ট টিস্যুর ক্ষয়ক্ষতি সারিয়ে তুলে ত্বক সুস্থ রাখে৷ ডাবের জল শরীরের আর্দ্রতা ধরে রেখে আপনাকে উজ্জ্বল ত্বক উপহার দেয়৷ এমনকী, বয়সের দাগছোপ দূরে রাখতেও ডাবের জল খুবই কাজের!
ত্বকের জন্য ম্যাজিক প্রক্রিয়া
হলুদ-চন্দনের ফেসপ্যাক
ভ্যানিলা আইসক্রিম আর চকোলেট সস যেমন রাজযোটক, চন্দন আর হলুদের জুটিও তেমনি অব্যর্থ৷ ত্বকে হলুদ ছোপ পড়া আটকাতে কস্তুরী হলুদই ব্যবহার করুন৷ স্বাভাবিক ও কম্বিনেশন ত্বকের জন্য হলুদ গুঁড়ো আর চন্দন গুঁড়ো একসঙ্গে গোলাপজল দিয়ে মিশিয়ে ত্বকে লাগান৷ ত্বক শুষ্ক হলে গোলাপজলের বদলে ব্যবহার করুন দুধ৷ দেখুন একবার লাগানোতেই আপনার ত্বক কতটা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে!
গোলাপ গুঁড়ো, আমন্ড গুঁড়ো আর জাফরানের ফেসপ্যাক
তিনটি গুঁড়োই গোলাপজল আর মধু দিয়ে একসঙ্গে মিশিয়ে নিন৷ একটি দারুণ পুষ্টিকর ফেসপ্যাক তৈরি হয়ে যাবে৷ ত্বকের দাগছোপ, অসমান রং ঠিক করতে জুড়ি নেই এই প্যাকটির৷ এটি ব্যবহার করলে ত্বক নিমেষে আর্দ্রও লাগবে৷
পার্টিতে যাওয়ার আগে লেবু মধুর ফেসপ্যাক
রাতে বিয়েবাড়ি আছে, ত্বক নিমেষে ঝলমলে করে তোলার উপায় খুঁজছেন? উপায় রয়েছে হাতের কাছেই৷ দুটো ডিমের সাদা অংশ ফেটিয়ে নিন, তাতে যোগ করুন দু’ চামচ মধু আর আধখানা লেবুর রস৷ এই প্যাকটি মুখের রোমছিদ্র সঙ্কুচিত করতে সাহায্য করে, মুখের ত্বক টানটান করে তোলে, মুখ উজ্জ্বল দেখায়৷ এই প্যাকটি লাগিয়ে ধুয়ে ফেলার পর আগে ময়শ্চারাইজ়ার মেখে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন, তারপর মেকআপ করতে শুরু করুন৷
আমন্ড ফেস অ্যান্ড বডি স্ক্রাব
কয়েকটা আমন্ড কয়েক ঘণ্টা জলে ভিজিয়ে রাখুন, তাতে খোসা ছাড়ানো সহজ হবে৷ তাড়াহুড়ো থাকলে জল গরম করে তাতে কয়েক মিনিট ভিজিয়ে রাখুন, তাতেও খোসা ঝটপট উঠে যাবে৷ টিস্যুতে চেপে বাদামগুলো শুকনো করে নিন, তারপর পিষে গুঁড়ো করে নিন৷ এই আমন্ডগুঁড়ো দু-তিন চাচামচ মধু আর কয়েক চিমটি দারচিনি গুঁড়োর সঙ্গে মিশিয়ে নিন৷ তাতে যোগ করুন আমন্ড, সেসেম বা নারকেলের মতো আপনার পছন্দসই যে কোনও তেল৷ মিশ্রণটায় একটা স্ক্রাব জেলের মতো ঘনত্ব আসবে৷ শুকনো মুখে এই স্ক্রাবটা লাগান, প্রয়োজনমতো জল মেশান৷ কয়েক মিনিট মাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন৷ ত্বকে বিন্দুমাত্র তেলতেলেভাব থাকবে না, বরং নরম উজ্জ্বল ত্বক পাবেন!
নারকেল তেলের ডিপ ক্লিন মাস্ক
ত্বক ডিটক্স করতে চান? কোনও কড়া পদ্ধতির সাহায্য না নিয়ে সহজেই এবার ডিটক্স করে ফেলতে পারেন আপনার ত্বক৷ এক চাচামচ কোল্ড প্রেসড ভার্জিন কোকোনাট অয়েলে আধ চাচামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে পরিষ্কার মুখে লাগান৷ দশ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন৷ আপনার ত্বক ভিতর থেকে পরিষ্কার মনে হবে৷ আপনাকে যদি প্রতিদিন দীর্ঘ সময় বাইরে কাটাতে হয়, অথবা রোদের মধ্যে বা দূষিত আবহাওয়ায় কাজ করতে হয়, তা হলে এই মাস্কটি থেকে খুবই উপকৃত হবেন৷ নিয়মিত ব্যবহারে (সপ্তাহে দু’বার) দেখতে পাবেন ত্বক কেমন ধীরে ধীরে স্বাস্থ্যদীপ্ত দেখাতে শুরু করেছে৷ আপনার যদি ব্রণ থাকে, তা হলেও এই প্যাকটি ব্যবহার করলে যথেষ্ট উন্নতি দেখতে পাবেন৷

জীবনচর্যার ম্যাজিক উপায়:
নিয়মিত হাঁটুন
আয়ুর্বেদে হাঁটাকে শ্রেষ্ঠ ব্যায়াম বলে মনে করা হয় কারণ এর ফলে গোটা শরীরেই সঞ্চালন হয় অথচ কোথাও বেশি চাপ পড়ে না৷ প্রকৃতির মধ্যে কিছুক্ষণ হাঁটলে আপনার ইন্দ্রিয়গুলো শান্ত হয়, হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত হয় এবং ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকে৷
পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন
সারাদিনে কাজের ফাঁকে ফাঁকে শরীরকে বিশ্রাম দেওয়া খুবই দরকার। এতে স্ট্রেস কমে, মনোযোগ ধরে রাখা যায় এবং শরীরও ঠান্ডা থাকে। আপনি অফিসেই থাকুন বা বাড়িতে, কিছুক্ষণের জন্য ফোন, টিভি ও কম্পিউটার বন্ধ করে দিন। আরামদায়ক অবস্থায় বসে চোখ বন্ধ করুন। এবার গভীরভাবে শ্বাস নিন। প্রতিটি শ্বাসে অনুভব করুন কীভাবে আপনার শরীরে বাতাস ঢুকছে ও বেরোচ্ছে। প্রতিদিন তিনবার দশ মিনিটের জন্য এই অভ্যাসটা করলেই আপনার সার্বিক ভালো থাকা ও মনোযোগে চোখে পড়ার মতো উন্নতি দেখতে পাবেন।
টাটকা খাবার খান
আজকের মাইক্রোওয়েভের যুগে প্যাক করা লাঞ্চ আর ফ্রিজে রাখা ডিনারে অভ্যস্ত হয়ে পড়া খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু আয়ুর্বেদ বলছে, টাটকা তৈরি করা গরম খাবার শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পৌঁছে দেয় এবং শরীরকে আরাম দেয়। টাটকা গরম খাবার খাওয়া সব সময় সম্ভব নয় ঠিকই, কিন্তু প্রক্রিয়াজাত এবং প্যাক করা খাবার আর প্রক্রিয়াজাত মিষ্টি খাবার তো বাদ দেওয়াই যায়, তাই না? তাতেই শরীরে ক্ষতির পরিমাণ অনেক কমাতে পারবেন।
হাতে গ্যাজেট নিয়ে খাওয়া নয়
টিভির সামনে বসে বা ফোন দেখতে দেখতে খাওয়ার মধ্যে আপাতভাবে ক্ষতিকর কিছু না থাকলেও আয়ুর্বেদ বলছে, এভাবে খেলে আপনার শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পৌঁছোয় না। বরং শান্ত পরিবেশে খাবার খেলে তা থেকে শরীর বেশি পুষ্টি পায়।
মাঝেমধ্যে শরীর ডিটক্স করুন
কাঁচা সবজি, টাটকা ফল, ভেষজ চা, শুকনো ফল খান। এই সব খাবারের পুষ্টিগুণ শরীরকে ভিতর থেকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করবে। যেদিন ডিটক্স করবেন, সেদিনট সমস্ত রান্না করা খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিনি ও মিষ্টি থেকে দূরে থাকুন। এতে শরীর পর্যাপ্ত এনার্জি পাবে, সমস্ত টক্সিনও বেরিয়ে যাবে।
মাসাজ নিন
আয়ুর্বেদ মাসাজের উপর খুব জোর দেয়। শরীর থেকে টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ বের করে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে মাসাজ। তা ছাড়াও মাসাজের অন্য উপকারিতাও রয়েছে। সার্বিকভাবে ভালো থাকার জন্য মানসিক চাপ কমিয়ে ভালো ঘুমেরও প্রয়োজন রয়েছে, যা মাসাজ থেকে পাওয়া যায়। সৌন্দর্যের দিক থেকে দেখতে গেলে মাসাজ ওজন কমাতে সাহায্য করে, ত্বকের অবস্থা ভালো করে, গায়ের রংও উজ্জ্বল করে তোলে। ইন্দুলেখা ভৃঙ্গ অয়েল দিয়ে নিয়মিত মাথায় মাসাজ নিন। এতে রয়েছে একটি সেলফি চিরুনি অ্যাপ্লিকেটর যা স্ক্যাল্পে সরাসরি তেল পৌঁছে দেয়, এবং এ থেকে আপনি দীর্ঘমেয়াদি সুফল পেতে পারেন।
নিজস্ব কোনও শখের চর্চা করুন
আয়ুর্বেদ বলছে, সুস্থ শরীর পেতে হলে সুস্থ মন থাকাও খুবই দরকার এবং সে জন্য আয়ুর্বেদ একটি সার্বিক প্রক্রিয়ার উপর জোর দেয়। মানসিক চাপ কমাতে ও সার্বিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য জীবনে কোনও একটা শখ থাকা খুব দরকার। গান শুনুন, বন্ধুদের সঙ্গে সিনেমা দেখুন, সপ্তাহান্তে ট্রেকিংয়ে বেরিয়ে পড়ুন। এমন কিছু করুন যা আপনাকে সবসময় উৎসাহী, চনমনে ও তরুণ করে রাখবে।
আয়ুর্বেদিক পদ্ধতিতে জীবনচর্যার এই প্রাথমিক নিয়মগুলি মেনে চললে সকলেই পরিপূর্ণ স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্যের অধিকারী হতে পারবেন। সবসময় সুস্থ থাকুন, সুন্দর থাকুন!
What's Your Reaction?
আমি এডভোকেট সুলতানা মাহমুদ, কন্ট্রিবিউটর লেখক হিসাবে ফেমিনাইরা-তে লিখছি। নারী ও শিশু নির্যাতনমূলক অপরাধসমূহ আইন নিয়ে আমি কাজ করি। আপনি যদি নারী বিষয়ক কোনও আইন জানতে চান তাহলে আমাদেরকে ইমেইল করুন: [email protected] । আমরা আপনার বিষয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করবো।