স্ক্যাল্প মাসাজেই লুকিয়ে রয়েছে নানা রোগ সারানোর চমকপ্রদ ক্ষমতা

ছোটবেলার কথা মনে আছে? কীভাবে ধরেবেঁধে বসিয়ে চুলে চুপচুপে তেল লাগানোর পর মাথায় ঘষে ঘষে মালিশ করে দিতেন মা-ঠাকুমারা? অসহায়ভাবে আত্মসমর্পণ করা ছাড়া উপায় থাকত না কোনও। সত্যি বলতে বহু বছর ধরে ভারতে ঘরোয়া রূপচর্চার পদ্ধতিতে একটা বড়ো জায়গা জুড়ে রয়েছে হট অয়েল মাসাজ। মাথায় তেলমালিশের এই চিরন্তন ঘরোয়া পদ্ধতির উপকারিতা নিয়ে ধীরে ধীরে সজাগ হচ্ছে গোটা পৃথিবী। সময় পেলেই সালোনে গিয়ে স্ক্যাল্প মাসাজের আরামে ডুবে যেতে ভালোবাসছেন অধিকাংশ মেয়ে। আসুন জেনে নেওয়া যাক চিরন্তন এই স্ক্যাল্প মাসাজের বেশ কিছু উপকারিতা।
মানসিক চাপ কমায়
সারাদিনে যত কাজের চাপই থাকুক, দিনের শেষে হাত-পা ছড়িয়ে একটা স্ক্যাল্প মাসাজ নিতে পারলে নিমেষে আপনি হালকা, চনমনে হয়ে উঠবেন। আসলে মানসিক চাপ আমাদের শরীরের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা আর হরমোনের উপর প্রভাব ফেলে। হরমোনের এই ওঠাপড়ার ফলে চুল উঠে যেতে পারে। স্ক্যাল্প মাসাজ নিলে কিন্তু আপনি মুহূর্তে শান্ত হয়ে যাবেন, স্ট্রেসের মাত্রাও সঙ্গে সঙ্গেই অনেকটা কমে যাবে। স্ক্যাল্প মাসাজ সেরোটোনিনের ক্ষরণ বাড়ায় বলে মনে করা হয়। সেরোটোনিন হল একটি কেমিক্যাল তথা নিউরোট্রান্সমিটার যা মনমেজাজ হালকা রাখতে সাহায্য করে৷ আর চুল ওঠা বন্ধ হলে মনমেজাজ ভালো হতে বাধ্য!
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ: স্ক্যাল্প মাসাজ নেওয়ার সময় ঘাড় আর কাঁধেও মাসাজ নিতে ভুলবেন না! যাঁরা দিনভর কম্পিউটার আর স্মার্টফোনে মুখ গুঁজে রাখেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এ কথা সবচেয়ে বেশি প্রযোজ্য৷
স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়, চুলের গোড়া মজবুত করে
সুস্থ চুলের জন্য সুস্থ স্ক্যাল্প খুবই দরকার কারণ চুলের গোড়ায় পুষ্টি পৌঁছোয় স্ক্যাল্প থেকেই৷ সপ্তাহে একবার তেল মাসাজ স্ক্যাল্প আর্দ্র থাকতে সাহায্য করে৷ অয়েল মাসাজের ফলে স্ক্যাল্প থেকে মৃত কোষও উঠে যায়, যা চুলের পক্ষেও ভালো৷ কারণ স্ক্যাল্প শুষ্ক হলে বা তাতে আঁশের মতো মৃত কোষ থাকলে চুল ওঠার পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে৷
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ: বেশিরভাগ মেয়েই তেল মাসাজের সময় চুলেই মাখেন৷ সেটা না করে স্ক্যাল্পে সরাসরি তেল লাগানো উচিত৷ ইন্দুলেখা ভৃঙ্গ অয়েল-এর মতো তেল ব্যবহার করুন৷ এর সঙ্গে একটি মোটা দাঁড়ার সেলফি চিরুনি রয়েছে যা পুষ্টিকর ওষধি গুণে সমৃদ্ধ তেল সরাসরি আপনার স্ক্যাল্পে ও চুলের গোড়ায় গোড়ায় পৌঁছে দেয়, ফলে চুল ওঠা কমে এবং স্ক্যাল্প ও চুলের স্বাস্থ্যও বজায় থাকে৷ বোতলটি আস্তে করে চাপুন এবং সেলফি চিরুনির সাহায্যে গোটা মাথায় তেল লাগিয়ে নিন৷ এবার আঙুলের ডগা দিয়ে হালকা হাতে চক্রাকারে মাসাজ করুন৷
স্ক্যাল্পে রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে তোলে
স্ক্যাল্প মাসাজ মুখে ও মাথায় রক্ত সংবহন বাড়িয়ে তোলে৷ চুলের ফলিকলে (আপনার চুলের একমাত্র জীবিত অংশ) রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি মানেই আরও সুস্থ, ঝলমলে চুল! মাথায় অর্থাৎ স্ক্যাল্পের নিচে যে সূক্ষ্ম শিরা-উপশিরাগুলো আছে, মাসাজের ফলে সে সব প্রসারিত হয় এবং হেয়ার ফলিকলে রক্তের সংবহন বাড়ে৷ স্বাভাবিকভাবেই চুলের বৃদ্ধি বেশি হয়৷
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ: কপালের দু’পাশে মাসাজ করলে টেনশন কমে এবং মাথায় রক্তের সংবহন বেড়ে যায়৷ কপালের দু’পাশে ছোট ছোট চক্রাকার গতিতে মাসাজ করতে শুরু করুন, তারপর ধীরে ধীরে দু’পাশে মাসাজ করতে করতে উঠতে থাকুন মাথার উপর পর্যন্ত৷ একইভাবে ফিরে আসুন নিচে, আবার একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করুন৷
ঘুম ভালো হয়
রাতে ঘুমোতে অসুবিধে হলে, ঘুম না হলে শুতে যাওয়ার আগে একটা স্ক্যাল্প মাসাজ নিয়ে দেখতে পারেন! স্মার্টফোন, ল্যাপটপ সহ সমস্ত গ্যাজেট বন্ধ করে দিন, ঘরের আলো কমিয়ে দিন এবং তারপর তেলসহ বা তেল ছাড়াই হালকা প্রেশারের মাসাজ নিন৷ প্রতি রাতে এমন মাসাজ নিলে ঘুম যে আসবেই তা নিশ্চিত হয়েই বলা যায়৷ যাঁরা খুব ক্লান্ত থাকেন, তাঁদেরও বাড়তি এনার্জি জোগাবে এই স্ক্যাল্প মাসাজ৷
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ: ১৫ মিনিটের হালকা মাসাজই আপনাকে সারা রাত নিশ্চিন্তে ঘুমোতে সাহায্য করবে৷
সঠিক তথ্য জানুন

‘শ্যাম্পু করার আগে স্ক্যাল্পে অয়েল মাসাজ করা ভালো’: ভেজা অবস্থায় চুল সবচেয়ে ভঙ্গুর অবস্থায় থাকে, তাই আগে অয়েল মাসাজ করে নিলে শ্যাম্পুর সময় চুল বেশি ঘষতে হবে না, ফলে চুল ভেঙে ঝরে যাওয়ার পরিমাণও কমবে।
‘সঠিক তেল বেছে নেওয়াই হল চুল ও স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্য ধরে রাখার চাবিকাঠি’: চুলের স্বাস্থ্যের জন্য নারকেল তেল, বিশেষ করে ভার্জিন কোকোনাট অয়েলের কোনও বিকল্প নেই। চুলে ও মাথার ত্বকে আর্দ্রতা পৌঁছে দেওয়াই শুধু নয়, নারকেল তেল চুলের বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। আর তাতে যদি থাকে ভেষজের গুণ, তা হলে তো কথাই নেই! ইন্দুলেখা ভৃঙ্গ অয়েলে রয়েছে ভেষজ ভৃঙ্গরাজের গুণ। চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে বলে বহু যুগ ধরে আয়ুর্বেদে ব্যবহার করা হয় ভৃঙ্গরাজ।
‘মাসাজ করার সময় নখ লাগাবেন না’: নখ দিয়ে স্ক্যাল্প বেশি ভালো করে পরিষ্কার করতে পারবেন ভাবলে ভুল করছেন। মাথার ত্বকে নখ দিয়ে চুলকোলে কেটে গিয়ে জ্বালা করতে পারে, ত্বক চিড়বিড় করতে পারে এবং আরও নানা সমস্যাও দেখা দিতে পারে। আঙুলের ডগার নরম অংশ দিয়ে মাসাজ করুন এবং পছন্দমতো চাপ বাড়ান বা কমান।
‘খেয়াল রাখুন মাসাজের সময় চুল যেন জট পাকিয়ে না যায়’: মাথায় মাসাজ নেওয়ার সময় আমাদের অনেকেরই মাত্রাজ্ঞান থাকে না। খেয়াল রাখুন যাতে কোনওমতেই চুলে জট না পড়ে। ইন্দুলেখা অয়েলের সঙ্গে যে সেলফি চিরুনিটি পাওয়া যায়, সেটি এ ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধেজনক। এটি আর পাঁচটা অ্যাপ্লিকেটরের চেয়ে অনেক ভালোও বটে। এর চওড়া দাঁড়া সমস্ত মাথায় সমানভাবে তেল লাগাতে সাহায্য করে এবং চুল জটমুক্ত রাখে।
What's Your Reaction?
আমি প্রিয়াংকা, ঘুড়তে যেতে আমার খুব ভাল লাগে। আমি সুযোগ পেলে প্রায়ই ভ্রমণ করি। নারী হিসেবে কেন আমি অদম্য থাকবো? নারী বলে আজ আমি নিজেকে আরো বিকোশিত করার সুযোগ পাচ্ছি।