Now Reading
ইমিউনিটি কি চাইলেই বাড়ানো যায়? জেনে নিন সত্যিটা ঠিক কী

ইমিউনিটি কি চাইলেই বাড়ানো যায়? জেনে নিন সত্যিটা ঠিক কী

ইমিউনিটি কি চাইলেই বাড়ানো যায়? জেনে নিন সত্যিটা ঠিক কী

কোভিড 19 রোগটি যবে থেকে আমাদের জীবনকে গভীরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে আরম্ভ করেছে, তবে থেকেই বারবার শোনা যাচ্ছে একটি তথ্য — যাঁদের ইমিউনিটি বেশি, তাঁদের এ রোগ সেভাবে কাবু করে উঠতে পারছে না। স্বাভাবিকভাবেই সবাই খড়কুটো আঁকড়ে ধরার মতো করে ইমিউনিটি বাড়িয়ে তুলতে চাইছে। যে সব খাবার বা পানীয় প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে পারে বলে সাধারণের বিশ্বাস, তার প্রায় সব ক’টিই ঢুকে পড়েছে হেঁশেলে। কিন্তু এই ধরনের চিন্তাভাবনা কতটা যুক্তিযুক্ত?

তবে তারও আগে জানা দরকার, ইমিউন সিস্টেম বা প্রতিরোধক্ষমতা বলতে ঠিক কী বোঝায়। এ তথ্য নিশ্চয়ই জানেন যে, আমাদের শরীরে বাইরে থেকে ঢুকে পড়া ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে লড়াইটা করে শ্বেত রক্তকণিকা? আমাদের ইমিউন সিস্টেম এই শ্বেত কণিকা তৈরি করে, সঞ্চয় করে রাখে এবং দরকারের সময় ছেড়ে দেয় রক্তস্রোতে। স্বাভাবিকভাবেই যাঁর প্রতিরোধী শক্তি যত সবল, তিনি তত কম ভোগেন।
ফিজিশিয়ান ডা. প্রবীর কুমার দাস বলছেন, “দেখুন, প্রতিটি মানুষের শরীর আলাদা, তার চেয়েও বড়ো ধাঁধাঁ হচ্ছে আমাদের প্রতিরোধক্ষমতা। বাইরে থেকে দেখে বোঝা সম্ভব নয় যে আপনার ইমিউনিটি কতটা শক্তিশালী — তাই তা বাড়ল না কমলো, সেটাও জানা কঠিন। আপনি রাতারাতি প্রচুর ভিটামিন খেতে আরম্ভ করলেই ইমিউনিটি বাড়ার কথা নয়। সামগ্রিকভাবে সুস্থ এবং ডিসিপ্লিনড থাকার চেষ্টা করতে হবে।” সঙ্গে যোগ করছেন, “সুষম খাবার খেতে খান। জিমে গিয়ে ঘাম তো আর এখন ঝরাতে পারবেন না, কিন্তু অ্যাকটিভ থাকতে হবে — বাড়ির ভিতরেও হাঁটাহাঁটি করতে পারেন। দেখতে হবে যেন রক্তে বাড়তি চিনি না থাকে, ফ্যাটের বোঝা না বাড়ে। রক্তচাপ স্বাভাবিক হওয়া দরকার, হরমোনের স্তরে গোলমাল হলেও চলবে না। আর এ সব ঐশ্বর্য যাঁদের থাকে, সাধারণত দেখা যায় তাঁরা রোগব্যাধির সঙ্গে সহজে লড়াইও করতে পারেন।”

এই পর্যন্ত পড়ে অনেকেই উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন, বিশেষ করে যাঁদের ওজন বেশি বা হয়তো সুগার বা হরমোনের স্তরে গোলযোগের মতো কোনও সমস্যা আছে। কিন্তু এই যে সময়টা হাতে পেয়েছেন, সেটিকে সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগান এবং সুস্থ হয়ে ওঠার চেষ্টা শুরু করে দিন আজ থেকেই। শুরুটা করুন একেবারে সহজ কয়েকটি নিয়ম পালন করে।

সুষম, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যেস তৈরি করুন
এখন তো বাইরের খাবার খাওয়ার উপায় নেই একেবারেই, তাই বাড়ির রান্নাকে স্বাস্থ্যকর করে তোলার উপর জোর দিন। স্থানীয়, মরসুমি শাকসবজি ও ফল খাওয়ার চেষ্টা করুন। তার মাধ্যমে পাবেন প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেল। তবে সমস্ত শাকসবজি ও ফল খাওয়ার আগে ভালো করে ধুয়ে নেওয়া উচিত। এড়িয়ে চলুন ট্রান্স-ফ্যাট। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় যেন যথেষ্ট প্রো-বায়োটিক থাকে তা দেখবেন। প্রো-বায়োটিক আমাদের পেটের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। পেট ভালো না থাকলে আপনি খাবার থেকে পূর্ণ পুষ্টিগুণ জোগাড় করতে ব্যর্থ হবেন। তাছাড়াও যথেষ্ট পরিমাণ ফাইবারও থাকা উচিত খাবারে। কেবল ভিটামিন সি যে আপনাকে বাঁচায় সংক্রমণের হাত থেকে, তা ভাবলে ভুল করবেন। ভিটামিন ই এবং ডি-ও সমান জরুরি। খাবার থেকেই বি এবং এ গ্রুপের ভিটামিনও সংগ্রহ করতে হবে।

স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে রাখুন
হ্যাঁ, এখন যা পরিস্থিতি, তাতে মানসিক চাপ বাড়ার যথেষ্ট কারণ আছে। কিন্তু তা যেন মাত্রা ছাড়িয়ে না যায়, সে খেয়াল রাখতে হবে আপনাকেই। মেডিটেশন করুন, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান। মনে রাখবেন, এই খারাপ সময় দীর্ঘস্থায়ী হবে না, একদিন সব ঠিক হয়ে যেতে বাধ্য! স্ট্রেস আর প্যানিক আপনাকে আরও দুর্বল করে দেবে।

যথেষ্ট ঘুম জরুরি
ঘুমের অভাব হলে, বিশেষত ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে ‘রেস্টোরেটিভ স্লিপ’ বলে, তার অভাব হলে কিন্তু শরীর ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়তে আরম্ভ করবে। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে প্রতি রাতে সাত-আট ঘণ্টা ঘুম একান্ত প্রয়োজনীয়।

ব্যায়াম করুন, তবে মাত্রাছাড়া নয়
মনে রাখবেন, যা রয়, তা-ই সয়। অর্থাৎ, যাঁরা কোনওদিন ব্যায়াম করেননি, তাঁরা রাতারাতি প্রবল এক্সারসাইজ করতে আরম্ভ করতে আরম্ভ করলে মুশকিল। অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে আরম্ভ করলেও শরীর ভেঙে যেতে পারে। দিনে ঘণ্টাখানেক শারীরিক কসরত করলেই যথেষ্ট।

আপনার ওষুধপত্র হাতের কাছে আছে তো?
আমরা সবার মোটামুটি নিজেদের চিকিৎসা করতে পারি — কিন্তু প্লিজ এই সময়ে আপনার ডাক্তারের উপর আস্থা রাখাই ভালো। যে যে ওষুধ বা ইনহেলার নেওয়ার কথা সেগুলো নিন। যাঁদের ক্রনিক শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকে তাঁদের সাধারণত ফ্লু ভ্যাকসিন নিয়ে রাখার পরামর্শ দেন ডাক্তাররা। সে সব নিয়ম মেনে চললে আপনার প্রতিরোধক্ষমতাও শক্তিশালী হবে।

What's Your Reaction?
Excited
0
Happy
0
In Love
0
Not Sure
0
Silly
0
Scroll To Top