Now Reading
প্রতিনিয়ত মৃত্যুকে স্বরন করো পাপ থেকে দূরে থাকো

প্রতিনিয়ত মৃত্যুকে স্বরন করো পাপ থেকে দূরে থাকো

প্রতিনিয়ত মৃত্যুকে স্বরন করো পাপ থেকে দূরে থাকো

মানুষ মরনশীল। প্রত্যেক মানুষকে এই স্বাদ গ্রহন করতে হবে এর থেকে কারো পরিত্রাণ নেই।আমরা সবাই জানি মৃত্যুর পরে আমাদের কি অবস্থা হবে।আমরা যদি এই পৃথিবীতে ভাল কাজ করি তাহলে মৃত্যুরপরে আমাদের কবরের আজাব কম হবে আর যদি খারাপ কাজ করি তাহলে মৃত্যুরপরে আমাদের কবরের আজাব হবে সীমাহীন। এজন্য আমাদের উচিত প্রতিদিন মৃত্যুর কথা স্বরন করে অসত্য অন্যায় কাজ করা থেকে বিরত থাকা। আমরা এই দুনিয়ায় বেঁচে থাকার জন্য কতাে কষ্ট করে জীবিকা নির্বাহ করি এমনকি ভবিষ্যতে যাতে ভালাে থাকতে পারি সেই জন্য কিছু সঞ্চয় করে থাকি। কিন্তু বন্ধুরা একটু ভাবুন মৃত্যুর পরে জীবনের জন্য আমরা কতটুকু ভালাে কাজ সঞ্চয় করেছি। তা না হলে কিভাবে মুক্তি পাব কবরের আজাব থেকে।

তাই আমাদের উচিৎ প্রতিদিন প্রতি ওয়াক্তে মৃত্যুর কথা স্বরন করে নেক কাজ সঞ্চয় করা। বন্ধুরা আমরা যদি সব সময় মৃত্যুর কথা স্বরন করি তবে অন্যায় কাজ থেকে দূরে থাকব আর যদিও কোন অন্যায় কাজ করতে যাই তাহলে বুকটা একবার হলেও কাঁপবে।বন্ধুরা একটু ভাবেন আমরাতাে সবাই শিক্ষিত কিন্তু কিভাবে অশিক্ষিতের মতো কাজ করছি প্রতিনিয়ত।

 

বন্ধুরা একটা কথা সব সময় স্বরন রাখতে হবে এই দুনিয়ায় আমাদের জীবন সাময়িক কিন্তু মৃত্যুর পরের জীবন সীমাহীন। তাহলে এই দুনিয়া সাময়িক জীবনে টিকে থাকার জন্য আমরা যদি এত সংগ্রাম, সঞ্চয়, বিলাসিতা করে থাকি তবে মৃত্যুর পরের সীমাহীন জীবনের জন্য আমরা কতটুকু ভালােকাজ সঞ্চয় করতে পেরেছি যার বদোয়লােতে আমরা সীমাহীন জীবনে শান্তি পাব।

 

আমরাদের মধ্যে ধৈৰ্য্য শক্তি অনেক কম অল্প কিছুতে রাগ করি খারাপ ব্যবহার করি আমাদের নিকট লােকজনের সঙ্গে এমনকি আমাদের মা বাবা সাথেও করে থাকি।

বন্ধুরা একবার মৃত্যুকে স্বরন করেন এবং আল্লাহর কথা ভাবেন আমরা এই দুনিয়াতে কতাে জানাঅজানা অন্যায় করতাছি আল্লাহ তায়ালা কি আমাদের সাথে সাথে তার বিচার করতাছে না ধৈর্য্য ধরতাছে যাতে করে আমরা আমাদের ভুল গুলাে সুধরাতে পারি।

 

কারাে সাথে খারাপ ব্যবহার করিও না। কারন, মৃত্যুর আগে হয়তাে ক্ষমা চাওয়ার জন্য তাকে আর খুঁজে পাবে না।

হযরত উমর ফারুক (রাঃ)

আমরা মানুষের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে যে অট্টালিকা বানাইতাছি একটু ভাবেনতাে এই অট্টালিকার সুবিধা আমি কি একা ভােগ করবাে আমার সন্তানরা ভােগ করবে কিন্তু মৃত্যুর পরে এর হিসাব আমাকে একাই দিতে হবে।অথচ আপনার অন্যায় করা টাকা আপনার সন্তানরা ভােগ করতেছে আর আপনে মারা গেলে পাবেন মাত্র সারে তিন হাত জায়গা আর কঠিন শাস্তি।

হে মুমিনগণ! তােমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তােমাদেরকে স্মরণ থেকে গাফেল না করে। যারা একারণে গাফেল হয়, তারাই তাে ক্ষতিগ্রস্ত।আমি তােমাদেরকে যা দিয়েছি, তা থেকে মৃত্যু আসার আগেই ব্যয় কর। অন্যথায় সে বলবেঃ হে আমার পালনকর্তা, আমাকে আরও কিছুকাল অবকাশ দিলে না কেন? তাহলে আমি সদকা করতাম এবং সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। প্রত্যেক ব্যক্তির নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হবে, তখন আল্লাহ কাউকে অবকাশ দেবেন না। তােমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে খবর রাখেন।

সূরা মুনাফিকুন:৯-১১

মৃত্যু ও মৃত্যুর-পরবর্তী জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেবে। মহানবী (সা.) বলেন, তােমরা পাঁচ জিনিসকে পাঁচ জিনিসের আগে গনিমত (সম্পদ) মনে করাে: ১. জীবনকে বার্ধক্যের আগে, ২. সুস্থতাকে অসুস্থতার আগে, ৩. সচ্ছলতাকে অভাবের আগে, ৪. অবসরকে ব্যস্ততার আগে,৫. জীবনকে মৃত্যু আসার আগে।

‘ (মুস্তাদরিকে হাকিম, হাদিস: ৭৮৪৬)

ভালাে কাজ করা: মৃত্যুর প্রধান প্রস্তুতি হলাে নিজেকে ভালাে কাজে নিয়ােজিত করা এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখা। মহানবী (সা.) বলেন, তােমরা নেক আমলের দিকে দ্রুত অগ্রসর হও ঘুটঘুটে অন্ধকার রাতের অংশ সদৃশ ফেতনায় পতিত হওয়ার আগেই। ‘ (সহিহ মুসলিম,

পাপ কাজ পরিহার: পাপ পরিহারের মাধ্যমে মুমিন মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ প্রকাশ্য ওঅপ্রকাশ্য সব ধরনের পাপ নিষিদ্ধ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, বলুন! আমার প্রতিপালক নিষিদ্ধ করেছেন প্রকাশ্য ওপ্রতিপালক!কিছুকালেরজন্য অবকাশ দিলে দান করতাম এবং সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। ‘ (সুরা মুনাফিকুন, আয়াত: ১০)

মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকে মুমিন মৃত্যু যেমন অপরিহার্য, তেমন অনিশ্চিততার সময়কাল। কেউ জানে কখন তার মত হবে। তাই মমিনকেউ জানে কখন তার মৃত্যু হবে। তাই মুমিন মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকে সব সময়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, কেউ জানে না সে আগামীকাল কী উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না তার মৃত্যু কোথায় ঘটবে।’ (সূরা লােকমান, আয়াত : ৩৪)। আল্লামা ইবনে রজব (রহ.) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, মানুষের প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি প্রাণীর প্রতিটি মুহূর্ত যেন তার মৃত্যুর মুহূর্ত। এ জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে তারিক! মৃত্যু আসার আগেই মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হও। (আল মুস্তাদরিক আলাস সাহিহাইন, হাদিস ৮৯৪৯)

মুমিনের মৃত্যুর প্রস্তুতি এক আরব কবি বলেছেন, জীবন সে কয়েকটি চোখের পলকের নাম। অর্থাৎ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সময়কালই জীবন।

সুন্দর মৃত্যুর কামনা: রাসুলুল্লাহ (সা.) চাপা পড়ে, গর্তে পড়ে, পানিতে ডুবে, আগুনে পুড়ে ও বিষাক্ত প্রাণীর দংশনে মারা যাওয়া থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় কামনা করতেন।

(সুনানে আবি দাউদ হাদিস ১৫৫২)

আল্লাহ সবাইকে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন

অতীত পাপের জন্য তাওবা: মুমিন অতীত ভুল ও পাপের জন্য তাওবাকরার মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করবে।

পবিত্র কোরআনে মৃত্যুর আগে তাওবা না করা জুলুম আখ্যা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘যারা তাওবা করে না, তারা অবিচারকারী। (সুরা হুজরাত, আয়াত:১১

অসিয়ত করা: আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে মুসলিমের অসিয়তযােগ্য কিছু সম্পদ আছে তার উচিত নয় সে দুই রাত কাটাবে অথচ তার কাছে তার অসিয়ত লিখিত থাকবে না। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৭৩৮)

 

ঘুমানাের আগে মরনের স্মরণ:

নিদ্রা এক ধরনের মৃত্যু। নিদ্রায় বিভাের মানুষ মৃত ব্যক্তির মতে। পাশের বাড়িতে চুরি-ডাকাতি হলে সে টের পায় না। খুব পাতলা ঘুম না হলে বিছানায় পাশে থেকে কেউ উঠে গেলেও সে বুঝতে পারে না। অনেক কুন্তি কর্ণের মানুষকে তাে ঘুমন্ত অবস্থায় এক ঘর থেকে আরেক ঘরে নিয়ে গেলেও ঠাওর করতে পারে না। আসলে মৃত্যু তাে আত্মার স্থানান্তর। মানুষের ধর ভূমিতে থাকে, কিন্তু তার আত্মা চলে জান্নাত বা জাহান্নামের ঠিকানায়। আল্লাহর কবজায়।

নিদ্রার পূর্বাপর বেশ কিছু আদব ও আমল এবং বহু দু’আ ও যিকরের শিক্ষা পাই, প্রতিটি ঈমানদারের কর্তব্য হবে হক্কুল্লাহ ও হক্কুল ইবাদ তথা আল্লাহ ও তাঁর বান্দাদের হকসমূহ আদায়ের পাশাপাশি এসব আমল যথাসম্ভব বেশি বেশি সম্পাদন করা।

 

যেমন,

 

১- অপ্রয়ােজনে রাত না জেগে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়া। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার সালাতের আগে ঘুমানাে এবং

 

সালাতের পর তামেতক গল-গুজব করা খর

সালাতের পর অহেতুক গল্প-গুজব করা খুব অপছন্দ করতেন। অথচ দুঃখজনক সত্য হলাে, আমরা আজকাল টেলিভিশনে ইন্ডিয়ান সিরিয়াল কিংবা রাজনৈতিক আলাপের টক শাে শুনে মধ্য রাতে ঘুমাতে যাই।

 

২- আরেক দরকারী আমল আয়াতুল কুরসি পড়া।

 

৩- সর্বোপরি ঘুমানাের আগে-পরের দু’আ পড়া। বারা ইবনে আযেব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

 

নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন শয্যা গ্রহণ করতেন, তিনি বলতেন, আল্লহুম্মা বিসমিকা আহইয়া ও বিসমিকা আমুতু। (অর্থাৎ হে আল্লাহ আপনার নামে মৃত্যুবরণ করলাম এবং আপনার নামেই জীবিত হব।) আর ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর বলতেন, ‘আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আহইয়ানা বাদা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিনুশুর। (অর্থ যাবতীয় প্রশংসা ওই আল্লাহর জন্য যিনি আমাকে মৃত্যু দেয়ার পর জীবিত

প্রশংসা ওই আল্লাহর জন্য যিনি আমাকে মৃত্যু দেয়ার পর জীবিত

করে দিয়েছেন এবং তার কাছেই ফিরে যাব।) [মুসলিম : ২৭১১]

 

প্রতিনিয়ত মৃত্যুর কথা স্মরণ করা দরকার এ জন্য যে, প্রথমত এটা পাপ কর্ম থেকে বিরত রাখবে। দ্বিতীয়ত, বান্দা যখনই মৃত্যুর কথা স্মরণ করবে, তখন পরকালের পাথেয় সংগ্রহে তৎপর হবে। হাদিসে এসেছে, এক সাহাবি রাসুলুল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল, দুনিয়াতে সবচেয়ে বুদ্ধিমান ব্যক্তি কারা? তিনি জবাব দিলেন, যারা মৃত্যুর কথা অধিক পরিমাণে স্মরণ করে এবং তার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে। দুনিয়া-আখেরাতে তারাই সম্মান ও মর্যাদার মুকুট পরিহিত হবে (মুজামুল কাবির-১৩৫৩৬)।

আমাদের প্রত্যেককে মরতে হবে। মহান আল্লাহ মহাগ্রন্থ আল কোরআনের সুরা আল ইমরান ১৮৫ আয়াতে বলেন, ‘কুল্লু নাফসিন যাইকাতুল মাউত। অর্থাৎ প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে।

মৃত্যু যখন অবশ্যই আসবে, মৃত্যুর স্মরণ তাই জরুরি। মৃত্যুর চেয়ে বড় সত্যি আর কিছু কী আছে এই পৃথিবীতে? জীবনের মােহে পড়ে আমরা বেশিরভাগ সময়েই মৃত্যুর মতাে অবধারিত সত্য ভুলে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ি। মৃত্যুকে স্মরণ মানুষকে পাপকর্ম থেকে বাঁচায়। আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলতে সহায়তা করে। মনকে নরম করে। ইবাদতে আসে একনিষ্ঠতা। এমন কেউ কি আছে, যে মৃত্যুকে ভয় পায় না? মৃত্যুর স্মরণে মনটা কেঁপে ওঠে না? মৃত্যুকে স্মরণের কথা রাসুলুল্লাহর (সা.) একাধিক হাদিসে বলা হয়েছে। সাহাবিরা মৃত্যুকে স্মরণে হাউমাউ করে কাঁদতেন। আল্লাহ প্রেমে মশগুল মানুষ মাত্রই মৃত্যুর স্মরণে ভীত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জীবনের স্বাদ বিনষ্টকারী মৃত্যুকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করাে (তিরমিজি-২৩০৭)।

আমরা কেন ভুলে যাই- দৃশ্য-অদৃশ্য যা কিছু হয়; সবই আল্লাহপাক দেখেন। মানুষের মনের কথাও আল্লাহপাক জানেন। মানুষ মানুষকে ফাঁকি দিতে পারে; কিন্তু মহান রাব্দুল আলামিনকে ফাঁকি দেওয়া অসম্ভব। এই চিন্তা টুকু মাথায় থাকা জরুরি। কোরআন মজিদে বলা হয়েছে হে নবী, আপনি বলুন, তােমরা যে মৃত্যু থেকে পলায়ন করতে চাও, সেই মৃত্যু অবশ্যই তােমাদের কাছে পৌঁছবে। অতঃপর তােমরা অদৃশ্য ও দৃশ্য জ্ঞানী আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে। আর তিনি তােমাদের জানিয়ে দেবেন তােমাদের সেসব কর্ম, যা তােমরা দুনিয়াতে করতে (সুরা জুমা-৮)।

 

সুতরাং আমাদের সবার উচিৎ প্রতিনিয়ত মৃত্যুকে স্বরন করে আল্লাহর পথে চলে অসৎকাজ থেকে দূরে সরে নেক আমল গুলাে বেশি বেশি সঞ্চয় করা আর এটাই হল একজন আদর্শ শিক্ষিত লােকের মনােভাব।

 

 

What's Your Reaction?
Excited
0
Happy
0
In Love
0
Not Sure
0
Silly
0
Scroll To Top