ছুটি কাটানোর আদর্শ হলিডে ডেস্টিনেশন ধরমশালা-ম্যাকলয়েডগঞ্জ

দেবদারু, ওক আর পাইনে ছাওয়া কাংড়া ভ্যালির শান্ত পাহাড়ি শহর ধরমশালা। যদিও পর্যটকদের ভিড় এখানে লেগেই থাকে, তবুও প্রকৃতি এখানে এখনও ‘ভার্জিন’, মনোরম। তবে ধরমশালা যেতে হলে মার্চ থেকে মে আদর্শ সময়।
ধরমশালা শব্দর অর্থটি বেশ তাত্পর্যপূর্ণ পিলগ্রিমস রেস্ট হাউজ়। সত্যি এখানকার প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য, শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশ দৈনন্দিন জীবনের স্ট্রেস কাটিয়ে আপনাকে রিজুভিনেট করবে। ১৮৫৫ সালে শহরের পত্তন। কাংড়ার রাজা ধরমচাঁদের নামে এর নামকরণ হয় ধরমশালা। ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড এলগিন ধরমশালার প্রেমে পড়েন, সেই থেকেই ধরমশালা হয়ে ওঠে অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। ধরমশালার দু’টি ভাগ আপার ধরমশালা ও লোয়ার ধরমশালা। লোয়ার ধরমশালার প্রাণকেন্দ্র কোতোয়ালি বাজার। স্কুল, কলেজ, অফিস, ব্যবসাবাণিজ্য, বসতি সবই এই বাজার ঘিরে। বাসস্ট্যান্ড থেকে কিছুটা এগোলেই রয়েছে কাংড়া আর্ট মিউজ়িয়াম। ছোট হলেও মিউজ়িয়ামটি খুব সুন্দর। প্রাচীন কাংড়া ভাস্কর্য্য-স্থাপত্যের বিরল নিদর্শন আছে এখানে। মঙ্গল থেকে শনিবার সকাল ন’টা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত খোলা থাকে। হাতে একটু সময় থাকলে যেতে পারেন কোতোয়ালি বাজার থেকে মাত্র তিন কিমি দূরে ওয়ার মেমোরিয়ালে। ইন্দো চায়না ও ইন্দোপাকিস্তান যুদ্ধের সাক্ষী এই মেমোরিয়াল মনে শিহরণ জাগায়। এর কাছেই রয়েছে মহাকালীর মন্দির। ঘুরে আসতে পারেন বাজারের কাছেই হরিকুঠিতে। এখানে ১৮৯৭ সালে স্বামী বিবেকানন্দ এসে কিছুদিন ছিলেন।
ধরমশালার মূল আকর্ষণ হল আপার ধরমশালা। এর আবার দু’টো ভাগ রয়েছেম্যাকলয়েডগঞ্জ ও ফরসিথগঞ্জ। এরমধ্যে ম্যাকলয়েডগঞ্জ প্রধান পর্যটনকেন্দ্র। কোতয়ালি বাজার থেকে গাড়ি ভাড়া করে বা বাসে করে সরাসরি পৌঁছানো যায় ম্যাকলয়েডগঞ্জ। গাড়িতে সময় লাগবে আধঘণ্টা মতো। বাসে সময় লাগে একটু বেশি, মোটামুটি ৪৫ মিনিট। ব্রিটিশ শাসনের স্মৃতিবিজড়িত ম্যাকলয়েডগঞ্জে আবার দলাই লামা মনাস্ট্রি তৈরি করেন। তাই ম্যাকলয়েডগঞ্জ আবার ‘লিটল লাসা’ নামেও খ্যাত। এখানে অন্যতম দর্শনীয় কালচক্র মন্দির। নজর কাড়ে মন্দিরের পশ্চিমের বিশালায়তন কালচক্রটি (সময়ের চাকা) । এখানে কিছুটা সময় কাটিয়ে বেরিয়ে পড়ুন নামগিয়াল মনাস্ট্রির উদ্দেশ্যে। মনাস্ট্রির আয়তন দেখে রীতিমতো তাক লেগে যায়। এখানেই আছে প্রায় নয় ফুট উঁচু বিশাল বুদ্ধমূর্তি। মনাস্ট্রি ও চারপাশের প্রকৃতির শোভা এত সুন্দর, ছেড়ে আসতে ইচ্ছেই করবে না। এখান থেকে একটু দূরেই ভাগসুনাথ শিব মন্দির। গরম জলের প্রস্রবণ, জলপ্রপাত ভাগসুনাথের প্রধান আকষর্ণ। এখানকার সৌন্দর্যের লোভে পাড়ি জমান অনেক বিদেশে পর্যটক। প্রাচীন শিবের মন্দির, ঝরনা, সুইমিং পুল সব মিলিয়ে বৈচিত্রে ভরা ভাগসুনাথ আপনাকে নিরাশ করবে না তা হলফ করে বলতে পারি। এখান থেকে ম্যাকলয়েডগঞ্জ হয়ে সোজা চলে যান ট্রিউন্ড।
ম্যাকলয়েডগঞ্জের থেকে দূরত্ব মাত্র সাত কিমি। যাঁরা অ্যাডভেঞ্জার প্রিয়, তাঁরা হেঁটে ঘুরে আসতে পারেন। তবে রাস্তা খুব চড়াই, উতরাই। তাই পায়ে ব্যথা থাকলে বা হার্টের সমস্যা থাকলে হেঁটে না যাওয়াই ভাল। তবে রাস্তার দু’ধারে ওক ও রডডেনড্রনের শোভা অসাধারণ। যাওয়ার সময় রাস্তাতেই পড়বে গালুদেবীর মন্দির। একফাঁকে ঘুরে নিন। পরের গন্তব্য লিয়াকা। ট্রিউন্ড থেকে দূরত্ব পাঁচ কিমি। লিয়াকা না গেলে কিন্তু অনেকটাই মিস করবেন। এখান থেকেই শুরু বরফের রাজ্য। বরফে মোড়া শৃঙ্গ আপনাকে সাদার অভ্যর্থনা জানাতে সদা তৈরি। ধরমশালার আর এক আকর্ষণ ডাল লেক। পুণ্য সঞ্চয় করতে চাইলে স্নান করতে পারেন এই লেকে। কারণ, কথিত আছে এই লেকে স্নান করলে কৈলাস ও মানস সরোবসের মতোই নাকি পূণ্যলাভ হয়। লেকের পাড়ের শিবমন্দিরও ঘুরে নিতে পারেন।
আপার ও লোয়ার ধরমশালার মধ্যস্থলে আছে স্কুল অফ টিবেটান কালচার লাইব্রেরি। যাঁরা ইতিহাস পছন্দ করেন, তাঁদের কাছে তিব্বতীয় ভাষায় রচিত পুঁথি বা বই-এর আকষর্ণ নিসন্দেহে কম হবে না। এর দোতলাতেই আছে মিনি মিউজ়িয়াম। বুদ্ধের নানান মূর্তি সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে। ইতিহাসপ্রসিদ্ধ ছোট্ট এই শান্ত, শৈল শহরের অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যে আপনাকে মুগ্ধ করবে তা নিঃসন্দেহে বলতে পারি।
কীভাবে যাবেন ধরমশালা-ম্যাকলয়েডগঞ্জ
বাংলাদেশ সরাসরি ধরমশালার কোনও ফ্লাইট পরিচালিত হয় না। বাংলাদেশ থেকে ইউএস বাংলা বিমানে অথবা বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রেনে কিংবাস বাসে করে কলকাতায় যেতে হবে। কলকাতা থেকে ফ্লাইটে দিল্লি হয়েকানেক্টিং ফ্লাইটে ধরমশালা (এয়ার ইন্ডিয়া বা জেট এয়ারলাইন্সে) Kangra Airport এয়ারপোর্ট।
সেখান থেকে ধরমশালা। দূরত্ব ১৩ কিমি। ধরমশালারার সবচেয়ে কাছের রেল স্টেশন পাঠানকোট। কলকাতা স্টেশন থেকে জন্মু-তাওয়াই এক্সপ্রেসে পাঠানকোট যেতে পারেন অথবা হাওড়া থেকে হিমগিরি এক্সপ্রেসে চাক্কি ব্যাঙ্ক। সেখান থেকে অটোতে পাঠানকোট পৌঁছান। পাঠানকোট থেকে গাড়িতে ধরমশালা। দূরত্ব ৮৪ কিমি।সময় লাগে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা। এছাড়াধরমশালায়। ইচ্ছে হলে বাসেও যেতে পারেন। পাঠানকোট থেকে মুহুর্মুহ বাস ছাড়ে ধরমশালার উদ্দেশ্যে।
খাওয়া দাওয়া
ধরমশালাতে অথেন্টিক তিব্বতীয় খাবার পাবেন। গরম ধোঁয়া ওঠা থুকপা বা নরম তুলতুলে মোমো, ন্যুডলস অবশ্যই চেখে দেখুন। দারুণ সুস্বাদু।
কেনা -কাটা
ধরমশালা থেকে তিব্বতীয় হ্যান্ডিক্র্যাফ্টস কিনতে পারেন। কোতয়ালি বাজার বা আপার ধরমশালার অসংখ্য দোকান আছে। তবে তিব্বতীয় হ্যান্ডিক্রাফ্টসের জন্যে বেস্ট অপশন টিবেটান হ্যান্ডিক্রাফ্টস সেন্টার। এছাড়াও, রবিবার ফ্লি মার্কেট বসে, সেখান থেকেও কেনাকাটা করতে পারেন।
কোথায় থাকবেন ধরমশালা
দি এক্সোটিকা ধরমশালা
ডবল বেডরুম ৮৫০০ টাকা থেকে শুরু। ফোন: ৯১৮৬৭৯৯০৯১৯২, ৯৮৫৭৫৮৫৯৬০।
দি ওয়েস্টার্ন ইন্দ্রপ্রস্থ রিসর্ট অ্যান্ড স্পা
ডবল বেডরুম ৫৬৯০ টাকা থেকে শুরু। ফোন: ০৮৮৯৪৩৬৫৫৮৬, ০৯৮১০২২৯৪৬৪
হোটেল হোয়াইট হেভেন প্যালেস এস্টেট
ডবল বেডরুম ৫৮০০ টাকা থেকে শুরু। ফোন: ৯১৮৬৭৯০২৬১৬২, ৯৪১৮৪২৭৫৩১।
সি সিটাডেল রিসর্ট
ডবল বেডরুম ৩৫০০ টাকা থেকে শুরু। ফোন: ০৯২১৮৪৫৩২৪৫, ০১৮৯৪২৫৬১০০,
ব্লসম ভিলেজ রিসর্ট
ডবল বেডরুম ৪৫০০ টাকা থেকে শুরু। ফোন: ৯১৮৯২২৪৬৮৮০/৮১, ৯১৮৬৭৯২৪৬৮৮০
ম্যাকলয়েডগঞ্জ
স্প্রিং ভ্যালি রিসর্ট
ডবল বেডরুম ৩৩০০ টাকা থেকে শুরু। ফোন: ৯১৮৯২২২১২৮৭, ৯১১৮৯২২২১২৪৮
বেল্লা হাইটস
ডবল বেডরুম ৩৪০০ টাকা থেকে শুরু। ফোন: ৯১৯৮৫৭৬৬৬৩৩৩, ৯১৯৮৫৭৫৫৫৩৩৩
সূর্য রিসর্ট
ডবল বেডরুম ৩১২৫ টাকা থেকে শুরু। ফোন: ০১৮৯২২২১৪২০, ০১৮৯২২২১৪১৯
হোটেল গ্র্যান্ড হিল
ডবল বেডরুম ৩৩০০ টাকা থেকে শুরু। ফোন: ৯১৯৮১৬৪৯১৭৩৭, ৯৭৩৬৪৯১৭৪৭
হোটেল শিবানী ইন্টারন্যাশনাল
ডবল বেডরুম ৩০০০ টাকা থেকে শুরু। ফোন: ৯১৯৮০৫৮১৪৬০০, ০১৮৯২৬৫০৯৪৫
হোটেল ইন্ডিয়া হাউজ়
ডবল বেডরুম ২০০০ টাকা থেকে শুরু। ফোন: ০৯১১৮৯২২২১৪৫৭/২২১১৪৪
What's Your Reaction?
আমি প্রিয়াংকা, ঘুড়তে যেতে আমার খুব ভাল লাগে। আমি সুযোগ পেলে প্রায়ই ভ্রমণ করি। নারী হিসেবে কেন আমি অদম্য থাকবো? নারী বলে আজ আমি নিজেকে আরো বিকোশিত করার সুযোগ পাচ্ছি।