কিভাবে একমাত্র সন্তানকে আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়ে তু্লবেন

একমাত্র সন্তানকে লালন পালন করতে মাঝে মাঝে খুব বেগ পেতে হয়। ছোট্টা সোনামণি মাঝে মাঝে খুব দুষ্টামি করে সময় পার করে দেয়। চিন্তা নাই এমনটা মানসিক বিকাশের একটি অংশ।
ছোট পরিবার সুখী পরিবার। দুটি সন্তানের বেশি নয়, একটি হলে ভালো হয়’- বাংলাদেশ সরকারের স্লোগান মেনে একটি সন্তানকেই পৃথিবীতে এনেছেন রাহাত আর ফাতেমা। ‘‘দুটি সন্তান থাকা মানেই তাদের ঠিকঠাক ভরণপোষণের জন্য আমায় অনেক বেশি সময় কাজ করতে হত। একটি মাত্র সন্তান আছে বলে আমায় বাড়তি সময় কাজ করতেও হয় না, আবার বাচ্চার সঙ্গে সুসময় সময়ও কাটাতে পারি।’’
রাহাত আর ফাতেমার মতো বহু বাংলাদেশী এখন দুই সন্তানের বদলে একটি মাত্র সন্তান গ্রহণ করছেন। আপনারও যদি একজন সন্তান থেকে থাকে আর তাকে সঠিকভাবে বড় করে তোলার পথ খুঁজে পেতে চান, তা হলে পড়ুন নিন আমাদের পরামর্শগুলো
সন্তানকে সামাজিক করে তুলুন
অনেক সময়ই দেখা যায়, এক সন্তান একাকীত্বের শিকার হয়। বাবা-মায়ের অখণ্ড মনোযোগও সেই একাকীত্ব কাটাতে পারে না। তাই শুরু থেকেই বাচ্চাকে নানারকম সামাজিক পরিস্থিতিতে ছেড়ে দিন। পার্কে বেড়াতে নিয়ে যান, হবি ক্লাসে ভর্তি করে দিন, সামার ক্যাম্পে পাঠান। তাতে বাচ্চার নিজস্ব সামাজিক বৃত্ত তৈরি হবে, নিজের জিনিসটা আর পাঁচজনের সঙ্গে ভাগ করে নিতে শিখবে। এতে ভবিষ্যতে বিভিন্ন সামাজিক পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াও বাচ্চার পক্ষে সহজ হবে।
অতিরিক্ত আহ্লাদ দেওয়া বন্ধ করুন
একটি মাত্র সন্তান যাঁদের, তাঁরা একদিকে যেমন সবসময় বাচ্চার দিকে সতর্ক নজর রাখেন, তেমনি বাচ্চার নিরাপত্তার ব্যাপারেও তাঁরা খুবই স্পর্শকাতর হন। বাচ্চা পড়ে গেলে বা কাঁদলে তাঁরা কী করবেন বুঝে উঠতে পারেন না। কিন্তু সারাক্ষণ আগলে আগলে না রেখে বাচ্চাকে স্বাবলম্বী হওয়ার শিক্ষাই দেওয়া উচিত, যাতে বন্ধুদের সঙ্গে ঝামেলা, স্কুলের সমস্যা সে নিজেই মিটিয়ে নিতে পারে।
বাচ্চাকে শৃঙ্খলা মেনে চলতে শেখান
বাচ্চা রাস্তায় বেরোলেই যদি নতুন খেলনার জন্য বায়না করে, আর আপনি কিনে দেন, তা হলে কিন্তু ভবিষ্যতের সমস্যাকেই আপনি সারজল দিয়ে বড়ো করছেন। এতে বাচ্চা বুঝে যাবে, কী করলে আপনার মন গলানো সম্ভব। তাই বাচ্চা কাঁদলেই তার বায়না মেটাতে উদগ্রীব হয়ে পড়বেন না। বরং ওকে বুঝতে দিন, সবকিছু ও চাইলেই পেয়ে যাবে না। প্রতিদিনের একটা রুটিন বেঁধে দিন, গৃহকর্মীদের সঙ্গে সঠিক আচরণ করতে শেখান। নিজের চাহিদার পাশাপাশি অপরের চাহিদাকেও সম্মান করার শিক্ষা বাচ্চাকে দেওয়া দরকার।
‘আমি’ নয় ‘আমরা’
পরিবারে একটি মাত্র বাচ্চা থাকলে তার ধারণা হয়ে যায়, তার কথাই শেষ কথা। এই ধারণা একবার জন্মালে বাচ্চা প্রচণ্ড একগুঁয়ে হয়ে যায়। শিশুকে মানুষ করে তোলার প্রথম ধাপ, তাকে এই ধারণা থেকে বের করে নিয়ে আসা। ফলে আপনার যদি একটি সন্তান থাকে, তা হলে তাকে শুরু থেকে বোঝান, তার ইচ্ছে অনিচ্ছের উপর নির্ভর করে সবকিছু চলবে না। বাচ্চাকে বন্ধু বা তুতো ভাইবোনের সঙ্গে খেলনা বা খাবার ভাগ করে নিতে শেখান প্রথম থেকেই এবং তার সঙ্গে নিজেরাও সেই পথ অনুসরণ করুন।
বাচ্চাকে অনুভূতিপ্রবণ করে তুলুন
ঢাকা মেডিকেল কলেজের মানসিক স্বাস্থ বিয়ষক সহকারী অধ্যাপক মোঃ আবদুল্লাহ মামুন বলছেন, বাচ্চাকে ১ম থেকেই খোলামেলা পরিবেশে বড়ো হতে দিলে তাদের অনুভূতিগুলো জোরদার হয়ে ওঠে। বাচ্চাকে ব্যর্থতা, হতাশা, উদ্বেগ, ভয়ের মতো অনুভূতিগুলোর সঙ্গে পরিচিত হতে দিন। একমাত্র সন্তানেরা সবসময় চায় তাকে সবাই ভালো বলবে, বাহবা দেবে। জানা অঙ্ক ভুল করে ফেললে, আচমকা ফুলদানি ভেঙে ফেললে বাচ্চা নিজেই নিজের উপর রেগে যায়। বাচ্চাকে বোঝান, মাঝেমাঝে ভুল হওয়া খুব স্বাভাবিক। সবসময় সব কিছু ঠিক কাজ কোনও মানুষই করতে পারে না। তাই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। বাচ্চা একবার সে কথা বুঝে গেলে পরবর্তী পথ নিজেই ঠিক করে নেবে।