মুক্তি- আমার মুক্তি আলোয় আলোয়

জীবন এক বহতা নদী। সুখে দুখে সম্পর্কের টানা পোড়নে কত কিছু ঘটে যায় এ নদীর বাঁকে বাঁকে । যেখানে থাকে পাওয়া না পাওয়ার হিসেব নিকেশে। আর এ হিসাবের অমিলে বেলা শেষে এ জীবন নদীতে মানুষ কিন্তু একা

তারপরও মানুষ চারপাশের জগতকে আঁকড়ে ধরে বাঁচার প্রচেষ্টারত থাকে নিরন্তর।তবে বাস্তবিক জীবনের ঘাত প্রতিঘাতের সাথে লড়াই করা একা কোন মানুষকে কেউ যদি ভাবে তার উপর নির্ভরশীল একা এ-মানুষটি তাকে ছাড়া অচল এটা জীবনে চরম এক যন্ত্রণা।এ যন্ত্রণার সাথে আপোষ হয় না। কারণ কারো সাথে মানসিকভাবে নির্ভরতাকে কেবল উপলব্ধি করা যায়, ব্যাখ্যা নয়। এখানে থাকে না জীবনের পার্থিব চাহিদা মিটানোর হিসাব। কিন্তু আমাদের সমাজে এ সম্পর্ককে টিকে রাখা বড় কঠিন।আর একজন নারীর বেলায় তা আরও দুরূহ।

অচেনা আনমনে পড়ন্ত বিকেলে বারান্দায় বসে জীবনের ডায়রিটা নিয়ে ভাবতে গিয়ে দেখল, ছুটে চলা জীবনের পথে সবটুকু দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সে যে ভুলে গেছে নিজেকে। সঠিকভাবে বলতে গেলে, ‘জীবনের চাকা ঘুরাতে ঘুরাতে সে ভুলেই গেছে নিজের আত্মপরিচয়।সে নারী নাকি পুরুষ? আর্থিকভাবে নিজেকে মানুষ ভাবে বলে অবয়বের পরিচয় টা তার কাছে বাতুলতা মাত্র । কিন্তু এখন তার শুধু মাত্র একটা সিদ্ধান্তে নির্মম ভাবে সে বুঝল,যাই কিছু করুক না কেন, সে একজন নারী।আর দশটা মানুষের মত সে সব করতে পারে না।

নিজের মত করে চাইলে সব হবে না। যখন যেভাবে যেখানে তার জন্য একটা কারণ থাকা চাই। কিন্তু আবেগকে প্রশ্রয় না দিয়ে যুক্তি দিয়ে চলা এ জীবনটা যে মুক্তি পেতে চাইছে ক্লান্ত জীবন থেকে বড়। যদিও তার আবেগ বড় মূল্যহীন সবার চোখে। উল্টা অতি কাছের মানুষদের চোখে প্রশ্নবোধক চিহ্ন।এক মুহূর্তে সব পালটে গেল তার মুখে এ জীবিকার তাগিদে ছুটে চলা জীবন থেকে স্বেচ্ছায় সরে যাবার সিদ্ধান্ত শুনার পর।

আজ তার সকল কাজের হয়েছে অবসান। এ চেনা শহর চেনা মানুষগুলোর কাছে সে অনেকটাই অপাংক্তেয়। নাম যশ খ্যাতি সব যেন নিমেষে উবে গেল।নিজেকে যখনি গুটিয়ে নিতে চাইল তখনি দেখল জীবনে সম্পর্কের বাঁধনগুলো বড় আলগা।সে কাজের ক্ষেত্র হোক কিংবা পারস্পারিক সম্পর্ক এর ক্ষেত্রের হোক। মিথ্যা ফানুসের আড়ালে যন্ত্রণার সাথী কেউ নেই।

নিজের কাছে নিজের উত্তর খুঁজে নিতে গিয়ে যেটুকু কষ্টে চোখের জল ঝরেছে তার চেয়ে অনেক বেশী স্বস্তি পাচ্ছে এই ভেবে যে,’নিজেকে নিজের সাথী করেছে বলে।এ সম্পর্ক যে অন্তহীন জীবনের। অন্তত মিথ্যা মোহের প্রলাপে নিজেকে বিসর্জন দেয়া থেকে পেয়েছে সে মুক্তি।বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা তারা আকাশে উঠেছে কখন অচেনা টের না পেলেও আপন মনে গেয়ে উঠে ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’।