Now Reading
সম্পর্ক এর টানাপোড়নে সন্তান

সম্পর্ক এর টানাপোড়নে সন্তান

সম্পর্ক এর টানাপোড়নে সন্তান

দুজন মানুষ বিয়ে নামক সম্পর্ক দিয়ে সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়। সেখানে সুখ স্বপ্ন টা ছাড়া কিছুই থাকে। কিন্তু আবেগ আর বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে কখনো কখনো বিচ্ছেদ শব্দটাই জীবনের সব রং মুছে দেয়। দুজন মানুষের মিলনে যেমন অনেক দায়বদ্ধতা থাকে তেমনি বিচ্ছেদে সে দায়বদ্ধতার ভার অনেক বেশী বইতে হয়।

প্রেম এর আছে নানা রূপ নানা রং। তাই আবেগময় জীবনে দুজন মানুষ এর সম্পর্ক তে আসে তাদের সন্তান। সে সন্তান তার বাবা মা থেকে শিখে পরিবারের প্রতি পারস্পারিক ভালোবাসা মায়া মমতা। জানে জগত কে।

যখন একটি পরিবারে কাণ্ডারি বাবা মায়ের সম্পর্ক তিক্ততাতে পরিণত হয় তার সবচেয়ে বেশী ভুক্তভোগী হয় সন্তান। তাদের কাছে প্রশ্ন হয়ে যায় বাবা ভালো না মা ভালো? কারণ দুজনে পরস্পরের প্রতি ঝগড়া আর দোষারোপরে কাদা ছোড়াছুড়ি করে সন্তানের সামনে। আলাদা হবার কথা আসে। তখন সন্তান ভাবে বাবা মা নিয়ে এক ঘরে থাকা হবে না আর। তাহলে সে কার সাথে যাবে?

এই যে প্রশ্নগুলো সন্তানের মনে জাগে এর প্রভাব সারা জীবন বয়ে বেড়ায় সে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সন্তানকে স্কুল কলেজ থেকে শুরু করে সবখানে শুনতে হয় ‘ ব্রোকেন ফ্যামিলি র বাচ্চা।’
কিন্তু দুজন মানুষের অমিলের মাঝে সন্তান নিয়ে টানাটানি করার আগে তাদের নিজেদের ভাবা উচিৎ,  আমরা আমাদের সন্তানদের মানসিকভাবে কতটা ক্ষতি করছি।

এ অবস্থাতে পরিবারে সন্তানদের সামনে কলহ বিবাদ না করে তাদেরকে বাস্তবতা বুঝাতে হবে। তৈরি করতে হবে আগামী দিনের বৈরী  পরিবেশের মাঝে বড় হতে।একজন সন্তানের কাছে বাবা -বাবাই মা মা- ই। সে প্রাপ্ত বয়স্ক না হবার আগে জীবনের অনেক কিছুই বুঝবে না। তাই সন্তানকে কেউই মিথ্যা দিয়ে কিছু না বুঝানো  শ্রেয়। বরং একটা স্বাভাবিক অবস্থার মধ্য দিয়ে তাকে  সুযোগ দিতে হবে সব বুঝতে ।

অনেক ক্ষেত্র দেখা যায় এসব পারিবারিক জটিলতাতে সন্তানরা বিপথে যায়।তারা তাদের মত করে বাঁচার পথ খুঁজে নেয় মাদক কিংবা আর কোন ভাবে।একজন মা বাবার জন্য এটা জীবনের চরম কষ্টের হয়।যার থেকে মুক্তি পাবার সুযোগ থাকে না।

না, তাই বলছি না সন্তানের মুখ চেয়ে নিজেদের অমিল নিয়ে এক ঘরে থাকতে হবে। তার চেয়ে অনেক উত্তম নিজেদের বোঝা পড়ার মাধ্যমে বিচ্ছেদ হয়ে স্বাভাবিক জীবন বেছে নেয়া। তবে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে আমাদের দেশে দেখা যায় এ বিচ্ছেদের ঘটনাতে সন্তান কে সালিশ বিচার এমনকি আদালতে নিয়ে যায় তার থাকার বিষয় জানতে।যেখানে ছেলে মেয়ের বিষয়ে সুপুষ্ট আইন রয়েছে। একবার কি কেউ চিন্তা করে দেখেন, আদালতের বারান্দায় বা কাঠগড়ায় দাঁড়ানো সন্তানের উপর দিয়ে কি ঝড় বয়ে যায়। কিংবা আগামী জীবনে সে পরিবার শব্দটির প্রতি কতটা বীতশ্রদ্ধ হবে এ ঘটনা থেকে।

সাম্প্রতিক সময়ে একটি মামলাতে দুটি ছেলেকে নিয়ে বাবা মায়ের বিচ্ছেদ রোধের চেষ্টা করছে আদালত।।ছেলেদের আবেগময় কান্নাতে বিচারক চোখের জল ফেলেছে। যা গন মাধ্যমে অনেকটা সিনেমার গল্পের মত দেখছে পড়ছে।সবাই। আদালত বাবা মাকে অনুরোধ করছে ছেলেদের প্রতি সদয় হতে।বাবা মা কি সিদ্ধান্ত নিবে সে এখন সময়ের ব্যাপার। কিন্তু এ ছেলেদের করুন চাহনির অন্তরালে বিষাদের জীবন সবাই বুঝবে না হয়ত। এমনকি বাবা মা দুজন কি একবার ভাবছে আজ তাদের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের প্রথম শিকার সন্তানরা। আদালত  আইনগত অধিকার দিতে পারবে কিন্তু মানসিক যন্ত্রণা কারো কমাতে পারবে না।তাই আইনে বাবা মায়ের বিচ্ছেদের পর সন্তানের অধিকার সহ সকল বিষয়ে বিধি বিধান থাকার পরেও সন্তানকে আদালতে হাজির না করার বিষয়টা মানবিকভাবে বিবেচনা করা দরকার।

কথায় বলে ‘ জোড়া তালি দিয়ে আর যাই হোক সংসার হয় না’। পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ,ভালবাসা নিজেদের বোঝা পড়ার নাম হল সংসার।সে সংসারে সন্তান হলো দুটি মানুষের অস্তিত্ব এর প্রতীক,সংসারের বিকশিত রূপ।তাই সম্পর্ক এর মাঝে যখন বিচ্ছেদ হানা দেয় তখন সন্তানদের হাতিয়ার করে নিজেদের প্রতিহিংসার প্রকাশ না ঘটানো  শ্রেয়। সন্তানের জন্মে নিজেদের ভূমিকা যেমন অনস্বীকার্য তেমনি তাদেরকে সুষ্ঠু সুন্দর জীবন গড়ার দায় দায়িত্ব প্রধান ও অন্যতম বাবা মায়ের। ভুলে গেলে চলবে না বিচ্ছেদ নামের শব্দটি দিয়ে বিপর্যস্ত হয় আপনাদেরই সন্তানটি প্রথমে।

What's Your Reaction?
Excited
0
Happy
0
In Love
0
Not Sure
0
Silly
0
View Comments (0)

Leave a Reply

Scroll To Top