Now Reading
ভাষা আন্দোলনে ড. হালিমা খাতুনের ভূমিকা এ জাতি চিরদিন মনে রাখবে

ভাষা আন্দোলনে ড. হালিমা খাতুনের ভূমিকা এ জাতি চিরদিন মনে রাখবে

ভাষা আন্দোলনে ড. হালিমা খাতুনের ভূমিকা এ জাতি চিরদিন মনে রাখবে

১৯৫২ সালের উত্তাল ২১শে ফেব্রুয়ারিতে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলনে ১৪৪ ধারা ভেঙে যে মিছিলটি প্রথম বেরিয়েছিল, সেই মিছিলের মুখ হালিমা খাতুন আর নেই। বেশ কিছু দিন যাবত হৃদরোগ, কিডনি জটিলতা, রক্তদূষণের মতো নানা জটিলতা আক্রান্ত হয়ে ভাষাসৈনিক ০৪জুলাই ২০১৮ ইং এই পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষিকার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। ভাষাসৈনিক হালিমা খাতুন ১৯৩৩ সালের ২৫ আগষ্ট বাগেরহাটের বাদেকাপাড়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি একই গ্রামের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক পাশ করেন। এরপর পরই মনমোহিনী গার্লস স্কুল, বাগেরহাট প্রফুল্ল চন্দ্র কলেজে পাঠ শেষে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এমএ এবং পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম এ পাস করেন।

তাছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নর্দান থেকে প্রাথমিক শিক্ষা বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি দেশে ফিরে খুলনা করোনেশন স্কুল এবং আরকে গার্লস কলেজে যোগদানের মাধ্যমে শিক্ষকতা শুরু করেন। পরে তিনি যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটে। এখান থেকে অধ্যাপক হিসেবে ১৯৯৭ সালে অবসর নেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে হালিমা খাতুন জড়িয়ে পড়েছিলেন ছাত্র রাজনীতিতে; পরে বাংলা ভাষা সংগ্রামেও তিনি জড়িয়ে পড়েন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ চত্বরের আমতলায় সমাবেশে তিনি ছাত্রীদের জড়ো করায় ভূমিকা পালন করেন। মুসলিম গার্লস স্কুল ও বাংলা বাজার গার্লস স্কুলের ছাত্রীদের আমতলায় নিয়ে এসেছিলেন মহিয়সী এই নারী। ভাষা আন্দোলনের প্রাক্কালে, পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে তার নেতৃত্বে নারী মিছিল বের হয়। সদস্য সংখ্যা চারজন- জুলেখা, নূরী, সেতারার সঙ্গে সারিতে ছিলেন হালিমা খাতুন।

ভাষা সৈনিকদের সেই মিছিলে গুলি চালায় পুলিশ। সেই মিছিলে হতাহতদের ছবি তুলে রেখেছিলেন ছাত্ররা। সেই ছবিটি তারা লুকিয়ে রেখেছিলেন হলে। পরে সে ছবিটা বিভিন্ন পত্রিকা অফিসে নিয়ে গিয়েছিলেন হালিমা খাতুনরা।

ভাষা সংগ্রামে আহত ছাত্র-জনতার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন ছিল। হালিমা খাতুন তার দল সংগঠিত করে চাঁদা তুলেছিলেন। পরে বাংলা ভাষার স্বীকৃতির দাবিতে গড়ে উঠা আন্দোলনে নারীদের সংগঠিত করার দায়িত্বও কাঁধে তুলে নেন তিনি। ভাষাসৈনিক হালিমা খাতুন হলের মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে ঢাকা শহরে চাঁদা তুলেছেন। লিফলেট বিলি, পোস্টার লেখা এবং মিছিল-মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করা ছিল হালিমা খাতুনের নিত্যদিনের রুটিন কাজ।

ভাষা আন্দোলনের দিনগুলোতে এসব কাজ করে তিনি ভাষা আন্দোলনকে এগিয়ে নেয়ার পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। হালিমা খাতুন মহল্লায় মহল্লায় গিয়ে মহিলাদের সংগঠিত করে ভাষা আন্দোলনে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য কাজ করেছেন।

ভাষা আন্দোলনে তার সেই অনন্য অবদানের জন্য শিল্পকলা একাডেমি তাকে ভাষা সৈনিক সম্মাননা প্রদান করে। ভাষা আন্দোলনে তার ঐতিহাসিক ভূমিকা এ জাতি চিরদিন মনে রাখবে।

মহিয়সী ভাষা সৈনিক হালিমা খাতুনের প্রতি রইল বিনম্র বিনীত শ্রদ্ধা।

What's Your Reaction?
Excited
0
Happy
0
In Love
0
Not Sure
0
Silly
0
View Comments (0)

Leave a Reply

Scroll To Top